আশুলিয়ায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু: স্বজনদের অভিযোগ


সাভারের আশুলিয়ায় অবস্থিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানালে রোগীর স্বজনদের মারধর করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। ঘটনার পর ভুক্তভোগীরা আশুলিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকেলে আশুলিয়ার বাইশমাইল এলাকায় এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। নবজাতকের পিতা আল-আমিন জানান, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সোনিয়া আক্তারকে প্রথমে জিরানী বাজারের একটি স্থানীয় ক্লিনিকে নেওয়া হয়। সেখানে নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করা হলেও ব্যর্থ হলে ক্লিনিকের পক্ষ থেকে দ্রুত অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপরই সোনিয়াকে আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।
স্বজনদের অভিযোগ, পূর্বের পরামর্শ ও রিপোর্ট উপেক্ষা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করে সময় নষ্ট করে। সকাল থেকে প্রচেষ্টা চালানোর পর রোগীর অবস্থার অবনতি হলে দুপুরে জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর নবজাতক নিঃশ্বাস না নেওয়ায় চিকিৎসকরা চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে ব্যর্থ হন। বর্তমানে নবজাতকের মা সোনিয়া আক্তার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নবজাতকের পিতা আল-আমিন আরও জানান, তাদের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সময়মতো অস্ত্রোপচার না করে পূর্বের ক্লিনিকের পরামর্শকে অগ্রাহ্য করে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, "আমরা আগেই দেখিয়েছি অপারেশন দরকার, তাহলে কেন তারা গুরুত্ব দিল না? এখন এই মৃত্যুর দায় কে নেবে?"
নবজাতকের চাচা শাকিল খান অভিযোগ করেন, “রোগী ভর্তি হওয়ার পরপরই অপারেশন করা যেত। কিন্তু চিকিৎসকরা সময়ক্ষেপণ করেছে। আমাদের প্রতিবাদে উল্টো আমাদের মারধর করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়।”
অন্যদিকে, অস্ত্রোপচারে উপস্থিত চিকিৎসক ডা. ফারজানা বেগম দাবি করেন, “চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা হয়নি। যথাসময়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে পেটের ভিতরে মল ত্যাগ এবং খাওয়ার সমস্যার কারণে।”
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক ডা. মো. আহমেদ জোবায়ের সোহাগ বলেন, “অপারেশন করেছেন আমাদের অভিজ্ঞ প্রফেসর ডাক্তার। রোগীর স্বামীকে সবকিছু জানানো হয়েছে। কোনো স্বজনকে মারধরের অভিযোগ সঠিক নয়।”
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক ও জাতীয় স্মৃতিসৌধ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. মাহমুদুল হাসান জানান, “অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন, তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।”
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন নিহত নবজাতকের পরিবার।
নতুন/কাগজ/সাইদুল/সাভার
