রূপগঞ্জে মশার রাজত্ব, জনজীবন চরম দুর্ভোগে


মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকার লাগোয়া রূপগঞ্জের দশ লাখ জনগোষ্ঠী। মশার যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও মশা নিধনে নেই কোন কার্যকর ভূমিকা। বালু ও শীতলক্ষ্যা নদের পঁচা পানির কারণে মশার যন্ত্রণা বেশি বলে জানা গেছে। রূপগঞ্জে মশা উপদ্রব অসহনীয় পর্যায়ে পৌছেছে।
যত্রতত্র ময়লা-আর্বজনা, ডোবা ও লেকগুলো কচুরিপানায় পূর্ন হয়ে থাকায়, পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতলের কারনে, নদ-খালের পানিতে অতিমাত্রায় দূষনের কারনে মশার এই উপদ্রব বলে জানা গেছে। ঘরে-বাহিরে সবখানে একই অবস্থা। কয়েল, স্প্রে ও মশারী ব্যবহার করেও মশার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ। মশা নিধনে নির্বিকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্যবিভাগ। তবে তারা বলছেন, সরকারীভাবে মশা নিধনে কোন বরাদ্দ না থাকায় কিছু করা যাচ্ছে না।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, রূপগঞ্জের ১০ লাখ বাসিন্দা মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মশার জ¦ালায় এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। কথা হয় নগরপাড়া এলাকার নুরুল হক মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত-দিন সমানে মশার জ¦ালায় অতিষ্ঠ আমরা। এরশাদের আমলে মাঝেমাধ্যে হেলিকপ্টারে করে মশার ওষুধ ছিটানো হতো, তখন ভালই ছিলাম। কিন্তু এখন আর এগুলো চোখে পড়েনা। বাগবাড়ি এলাকায় থাকেন কামাল আহম্মেদ রনজু। ব্যবসার খাতিরে সারাদিন বাইরে-বাইরে কাটাতে হয়। তার স্ত্রী ফেরদৌসি আক্তার জানান, তার নাতীকে স্কুলে পাঠিয়ে দিয়ে আরেক নাতীকে নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। দেড় বছরের নাতীকে দিনে শুইয়ে রাখলে মশা কামড়িয়ে দাগ বসিয়ে দেয়। দিনে-দুপুরে মশারি খাটিয়ে রাখতে হয় নাতীর জন্য। তাতেও রেহাই পাওয়া কষ্ট। আর রাত হলেতো কথাই নেই। মশার ভন-ভন শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। এতো মশা অথচ সরকার এইগুলা দেহেনা।
সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েল জ্বালিয়ে, ধূপ পুড়িয়ে, এ্যারোসল ¯েপ্র করে কিংবা মশা মারার বৈদ্যুতিক ব্যাট ব্যবহার করেও মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যাচ্ছে না। মশার যন্ত্রণায় স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে। অথচ এ বিষয়ে একেবারেই নির্বিকার রূপগঞ্জের জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্য বিভাগ। মশার জন্মস্থান নোংরা ড্রেন ও জলাশয়গুলোও পরিষ্কার করা হচ্ছে না। মশার লার্ভা মারার জন্যও কোন লার্ভিসাইডসহ অন্য কোন ওষুধ ¯েপ্র করা হচ্ছে না।
বালু ও শীতলক্ষ্যা নদের তীরবর্তী লোকজন জানান, আগে আমাদের এলাকাতে মশা ছিল না। এই অভিশপ্ত পঁচা পানি আসার পর থেকে মশার উপদ্রব বাড়তে থাকে। বালু ও শীতলক্ষ্যা নদের পচা পানি মশার বংশ বৃদ্ধির কারণ। তাছাড়া নোংরা ড্রেন ও জলাশয়তো রয়েছেই। রূপগঞ্জের নগরপাড়া, খামারপাড়া, কামসাইর, ইছাখালী, বড়ালু, পাড়াগাও, পূর্বগ্রাম, গঙ্গানগর, রূপসী, মুড়াপাড়া, বানিয়াদি, নিমেরটেক, বরুনা, নাওড়া, মাঝিনা, হরিণা, বাঘবাড়ী, দেইলপাড়া, নয়ামাটি, দক্ষিণপাড়া, কেওডালাসহ প্রায় শতাধিক গ্রামের মানুষ মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
বালুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণ গোপাল সরকার বলেন, ক্লাশে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর সময়ও মশায় কামড়ায়। মশার জ্বালায় ছাত্রছাত্রীরা ঠিকমতো লেখাপড়াও করতে পাড়ছে না। কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাসুম আহমেদ বলেন, মশার যন্ত্রণার কথা আসলে বলে বুঝানো যাবে না। তবে পঁচা পানির কারণে মশার উৎপাতটা বেশি। সরকারীভাবে বরাদ্দ পেলে হয়তো ফগার মেশিনের সাহায্যে মশার ঔষুধ ছিটিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যেতো। গঙ্গানগর এলাকার জহিরুল ইসলাম বলেন, খাইতে বইলেও মশার কারণে শান্তি পাইনা। খাবারের লগে (সাথে) মশাও মুখে ঢুইক্ক্যা যায়। এর থেইক্ক্যা কি কোন নিস্তার পামুনা। নগরপাড়া বাজারের চায়ের দোকানি রিগেল মিয়া বলেন, মশার উৎপাতের কারণে দোকোনে লোকজন চা খেতে আসাও বন্ধ করে দিয়েছে। কোন উপায় না পেয়ে তিনি এখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই ধূপের ধূয়া আর কয়েল জ্বালিয়ে দেন।
কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বলেন, মশার উপদ্রব এটা সত্যি কথা। কিন্তু সরকারীভাবে কোন ব্যবস্থা না নিলেতো আমরা কিছু করতে পারছি না। তবুও চেষ্টা করছি। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, মশার উপদ্রব বেশি এটা সত্যি। আমরা চেষ্টায় আছি মশক নিধনে।
