শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

সৈয়দপুরে ১০০০ শয্যার হাসপাতালের দাবি, বাড়তি ব্যয় ছাড়াই সম্ভাবনা

সৈয়দপুরে ১০০০ শয্যার হাসপাতালের দাবি, বাড়তি ব্যয় ছাড়াই সম্ভাবনা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রস্তাবিত ১০০০ শয্যার হাসপাতালটি রংপুর-দিনাজপুরের মিডল পয়েন্ট সৈয়দপুরে গড়ে তোলার দাবি জোরদার হয়ে উঠছে। প্রস্তাবিত এই হাসপাতাল তৈরীর জমি পেতে ব্যয় হবে না বাড়তি অর্থের।

একাধিক বিশিষ্টজনের মন্তব্যে জানা গেছে, সৈয়দপুর-ঢাকা মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকার কয়া ও কুন্দল মৌজায় রেলওয়ের ৫০ বিঘা অব্যবহৃত জমি পড়ে আছে। আর এই জমি পেতে সৃষ্টি হবে না কোনো জটিলতা। জমি অধিগ্রহণে হবে না কোনো বাড়তি ব্যয়। শুধুমাত্র মন্ত্রণালয় টু মন্ত্রণালয় জমির মালিকানার বদল হবে। ভৌগলিকগত কারণে বৃহত্তর রংপুর ও বৃহত্তর দিনাজপুরের মধ্যস্থলে অবস্থান সৈয়দপুরের।

সৈয়দপুর থেকে মাত্র ৩৬ কিলোমিটার দূরত্বে যেমন রংপুরের অবস্থান। একই দূরত্বে অবস্থান সৈয়দপুর থেকে দিনাজপুরের। সেজন্য রংপুর বিভাগের আট জেলার মানুষ সৈয়দপুর হয়ে রাজধানী ঢাকায় সড়ক, রেলপথ ও আকাশপথে যাতায়াত করে। মানুষের যাতায়াত ও পণ্য আনা নেয়ার কাজে সমতলে তিনটি পথ ব্যবহার হয়। এর মধ্যে সড়ক, রেল ও আকাশপথ। সৈয়দপুর থেকে দেশের যে কোনো প্রান্তে চলাচলের জন্য ওই তিনটি পথই সৈয়দপুরে বিদ্যমান।

সড়কপথে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া হতে ঢাকা যাতায়াত করলে সৈয়দপুর হয়েই যেতে হয়। রেলপথে চিলাহাটি টু ঢাকা যেতে হলেও যেতে হয় সৈয়দপুর হয়েই। এমনকি খুলনার মংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথে রয়েছে সৈয়দপুরের যোগাযোগ। রাজশাহী চলাচলকারী আন্তঃনগর বরেন্দ্র ও তিতুমীর এক্সপ্রেস চিলাহাটি থেকে ছেড়ে সৈয়দপুর হয়েই সকাল-বিকাল চলাচল করে। এছাড়াও উত্তর জনপদের ১৬ জেলার সবচেয়ে বড় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা উত্তরা ইপিজেড সৈয়দপুরের পাশেই অবস্থিত। এই ইপিজেড-এ চীনা ব্যবসায়ীদের কমপক্ষে ৫০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় তিন হাজার চীনা নাগরিক কাজ করে। এছাড়াও সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা ও বড়পুকুরিয়ার ৩৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে কর্মরত চীনা নাগরিকদের যাতায়াত সৈয়দপুর শহরে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সকল বিদেশি নাগরিকরা সৈয়দপুর হয়ে আকাশপথে তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে যাতায়াত করে। এদের সংখ্যাও প্রায় দুই হাজারের মতো। ওই চীনা নাগরিকদের অনেকেই রাত্রিযাপন করে সৈয়দপুরে। আর চীনের ব্যবসায়ীরা উত্তরা ইপিজেড-এ ঢাকা-সৈয়দপুর-ঢাকা যাতায়াত করে সৈয়দপুর বিমানবন্দর হয়ে।

অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর সৈয়দপুর হলেও যাত্রীসেবা মিলছে আন্তর্জাতিক মানের। এই বিমানবন্দরটি খুউব অচিরেই আন্তর্জাতিক আঞ্চলিক (হাব) বিমানবন্দর হতে চলেছে। ইতোমধ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের সকল প্রস্তুতি শেষ। শুধুমাত্র টাকা বরাদ্দ হলেই আগামী অর্থ বছরেই সৈয়দপুর বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য কাজ শুরু হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।


উত্তরা ইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, চীনা নাগরিকরা অসুস্থ হলেই সৈয়দপুর বিমানবন্দর হয়ে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য যায়। এমনকি তারা নিজ দেশে যাতায়াতের জন্যও সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ওপর নির্ভরশীল। ফলে চীনা নাগরিকদের চিকিৎসার জন্যও বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী ১০০০ শয্যার হাসপাতালটি সৈয়দপুরে গড়ে তোলা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
এ দাবির সমর্থনে জনমত তৈরীতে কাজ করছেন সৈয়দপুর নাগরিক অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন জাভিস্কো। তিনি বলেন, চীন প্রস্তাবিত হাসপাতাল সৈয়দপুরে নির্মাণ করা হলে আর্থিকভাবে দুর্বল এ জনপদের মানুষ অল্প টাকায় ভালো মানের চিকিৎসা পাবে।


কথা হয় রোটারী ক্লাবের সভাপতি রোটারিয়ান ডা. দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সৈয়দপুর থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে ভারতের পশ্চিম বাংলার উত্তরের কয়েকটি জেলা। মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন পশ্চিম বাংলার শিলিগুড়ি থেকে সৈয়দপুর হয়ে ঢাকা যাতায়াত করে। চীনের হাসপাতালটি সৈয়দপুর করা হলে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে ভারতীয়রাও চিকিৎসা নিতে পারবে। কারণ হিসাবে তিনি জানান, পশ্চিম বাংলার উত্তরের জেলাগুলো হতে কলকাতার দূরত্ব কয়েকশ মাইল। ফলে ওই জনপদের মানুষ উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত থাকে। চীনের এই হাসপাতালে অনেক কম ব্যয়ে অল্প সময়ে ভালো চিকিৎসা নিতে পারবে তারা। এতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জিত হবে।


বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সৈয়দপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান সরকার বলেন, আন্তর্জাতিক মানের যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে সৈয়দপুরে। শুধু বাংলাদেশ নয়, সীমান্ত এলাকার ভারতীয়রাও এখানে চিকিৎসা নিতে পারবে। নির্মিতব্য চীনের হাসপাতালটি এ কারণে সৈয়দপুরে হলে চিকিৎসার জগতে নতুন দ্বার খুলবে।


সমাজ কর্মী ও পরিবেশ আন্দোলনের নেতা আশরাফুল আলম বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশের রংপুর বিভাগ হতে কয়েক হাজার মানুষ ভারতের কেরালা রাজ্যে যায় চিকিৎসা নিতে। বাংলাদেশ থেকে কেরালার দূরত্ব কয়েক হাজার মাইল। ভাষাও ভিন্ন। সেজন্য চীনের ১০০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসাতালটি সৈয়দপুরে স্থাপন করা হলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হবে।
কথা হয় প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন সৈয়দপুর শিল্প সাহিত্য সংসদের সভাপতি ম.আ শামীমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভৌগলিক কারণেই উত্তর জনপদের সকল জেলার সঙ্গে সৈয়দপুরের যোগাযোগ অনেক উন্নত। আর যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলে মানুষ সহসাই যাতায়াত করতে পারে। সবদিক বিবেচনায় আর্থিকভাবে অনুন্নোত এই জনপদের মানুষের সুচিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী হাসপাতালটি সৈয়দপুরে স্থাপনের জন্য জোর দাবি করছি।


সৈয়দপুর পৌরসভার সাবেক পৌর কাউন্সিলর আকতার হোসেন ফেকু বলেন, চীনের প্রস্তাবিত হাসপাতালটি সৈয়দপুরে স্থাপন করা হলে বাংলাদেশী রোগীর সঙ্গে পশ্চিম বাংলার উত্তরের বাংলা ভাষাভাষী ভারতীয় নাগরিকরাও সুচিকিৎসার সুযোগ পাবে। আর এই হাসপতাল প্রতিষ্ঠায় সৈয়দপুর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে রেলওয়ের যে অব্যবহৃত জমি আছে তা কাজে লাগাতে পারবে। এতে আর্থিক কোনো ব্যয় হবে না। এই হাসপাতাল সৈয়দপুরে গড়ে তোলা হলে উত্তরা ইপিজেড, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ও মধ্যপাড়া কঠিন শিল্প প্রকল্পে যেসব চীনা নাগরিক আছে তারাও চিকিৎসা নিতে পারবে।


কথা হয় বিএনপি সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা শাখার সভাপতি প্রবীন রাজনীতিবীদ অধ্যক্ষ আবদুল গফুর সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, সৈয়দপুর একটি শিল্প সমৃদ্ধ ও বাণিজ্যিক এলাকা। এ কারণে দেশী বিদেশী মর্যাদাবান মানুষরা ব্যবসার জন্য সৈয়দপুরে আসেন। তারপরও রয়েছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। সবমিলে জনস্বার্থে সৈয়দপুরেই চীনের প্রস্তাবিত হাসপাতালটি নির্মাণ করার জোর দাবি করছি।


বাংলাদেশ-চীনমৈত্রী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কথা হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাবেক এমপি বিলকিস ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে চীনের রয়েছে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। সেকারণে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অনেক স্মৃতিবিজড়িত সৈয়দপুরে এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি সবিনয় নিবেদন করছি।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আরও পড়ুন