শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১২ বছর: আজও ক্ষতিপূরণের অপেক্ষায় রেবেকা

রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১২ বছর: আজও ক্ষতিপূরণের অপেক্ষায় রেবেকা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আজ রানা প্লাজা ট্রাজেডির ১২ বছর। সেদিন ভোরে ঘুম থেকে ওঠেন রেবেকা বেগম। স্বামী মোস্তাফিজুর রহমানকে খাইয়ে নিজে না খেয়েই পরিবারের সাত সদস্য মিলে রানা প্লাজার দ্বিতীয় তলায় কাজে যোগ দেন। পাশের লাইনে রেবেকার মা যখন খাওয়ার জন্য ডাকছিলেন ওই সময় হঠাৎ বিকট শব্দে ভবনটি ভেঙে পড়ে। সেই কক্ষেই দুই পা দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে আটকা পড়েন রেবেকা।

দুদিন পর সেখান থেকে স্থানীয় কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী চেষ্টা করে তাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় রেবেকা বেগমের পরিবারের দুজন কোনমতে প্রাণে বেঁচে ফিরলেও মাসহ বাকি সদ্যসরা রানা প্লাজার ভেঙে পড়া ভবনের ইট পাথরের কংক্রিটের মধ্যে হারিয়ে যান।


দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর আলাদিপুর ইউনিয়নের বারাইহাট চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের রাজমিস্তি মোস্তাফিজুর রহমানের স্ত্রী রেবেকা বেগম (২৯)। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে দুই পা হারিয়ে চিরতরে পঙ্গুত্ব জীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন রেবেকা। ঘটনার সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে বারাই চেয়ারম্যানপাড়ায় রেবেকা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে রেবেকা বলেন, সকাল ৯টার দিকে বিকট শব্দে রানা প্লাজা ধসে পড়ে। ঘটনার পর জ্ঞান ছিল না। জ্ঞান আসলে দেখেন পায়ের ওপর সিমেন্টের বিম চাপা পড়েছে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে এক বছর ধরে রেবেকার চিকিৎসা দেওয়া হয়। ওই সময় তার বাম পা কোমর পর্যন্ত ও ডান পা গোড়ালি পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে। এরপর দীর্ঘ ১১ বছর পার হয়ে গেছে। এর মধ্যে এক ছেলে ও মেয়ে সন্তানের মা হয়েছেন রেবেকা। মেয়ে সিদরাতুল মুনতাহা (১০) ৪র্থ শ্রেনিতে বারাই গোল্ডেন হোফস্ কিল্টার গার্ডেন স্কুলে পড়ে ও ছেলে মাদানী আন্নুর (৬) নার্সারি শ্রেনিতে পড়ে।

রেবেকা বলেন, ওই রানা প্লাজার ভবন ধসের পর সরকারি ঘোষণা ছিল যেসব শ্রমিক শরীরের দুইটি অঙ্গ হারিয়েছেন তাদেরকে ১৫ লাখ এবং যারা একটি অঙ্গ হারিয়েছেন তারা ১২ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাবেন। কিন্তু রেবেকা বেগম শরীরের দুইটি পা হারালেও তাকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। রেবেকা বেগম একটি পা হারিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের এমন ভুল তথ্যের কারণে রেবেকা সরকার ঘোষিত পুরোপুরি অর্থ পাননি। তাকে ও বাচ্চাদের দেখাশুনার জন্য তার স্বামী বাইরে ভালো করে কাজ ও করতে পারেন না। এভাবেই টানাপোড়ন এর মধ্য দিয়ে চলেছে তাদের সংসার। দুই ছেলেমেয়ের জন্য হলেও বাকি ৫ লাখ টাকা তাঁকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান রেবেকা।

তিনি বলেন, তার দুই’পায়ে চারবার করে আটবার ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে অপারেশন করতে হয়েছে। বর্তমানে দুইপায়ের হাড্ডি বের হয়ে আসায় প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে। চিকিৎসক খুব দ্রুত অপারেশন করতে বলেছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে সেটি করাতে পারছেন না রেবেকা।
রেবেকা বেগমের স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রানা প্লাজা ধসের দুই বছর আগে পছন্দ করে তারা বিয়ে করেছিলেন। তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন আর রেবেকা রানা প্লাজার পোশাক কারখানায়। বেশ ভালোই চলছিল তাদের সুখের সংসার। এরপর রানা প্লাজা ধসে তাদের সুখের সংসার লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ওই দুর্ঘটনায় ইট-পাথরের স্তপে হারিয়ে গেছেন মা চান বানু। দাদী কহিনুর ও ফুপু রাবেয়া মারা গেছেন। তবে তাদেরকে ব্র্যাক হিউম্যানিটারিয়ান প্রোগ্রামের আওতায় সাত লাখ ২১ হাজার টাকা ব্যয়ে বারাই আলাদিপুর ইউনিয়নে পাঁচ শতাংশ জমির ওপর একটি দুর্যোগ সহণীয় বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আরও পড়ুন