শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

শ্রীপুরে কথা কাটাকাটির জেরে খুন, প্রতিশোধে তিনটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

শ্রীপুরে কথা কাটাকাটির জেরে খুন, প্রতিশোধে তিনটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

গাজীপুরের শ্রীপুরে ধানের জমিতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি ছাড়তে বাধা দেয়ার জেরে যুবক নাজমুল হককে (৩৫) ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ও তার দুই স্বজনের বাড়িতে আগুন দিয়েছে উত্তেজিত এলাকাবাসী। আগুনে ঘরে থাকা আসবাবপত্রসহ সকল মালামাল পুড়ে গেছে। শুক্রবার (১০ মে) রাত ১১টার দিকে উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের যোগীরসিট গ্রামের গুজারমোড়ে ঘটনা ঘটে।

নিহত নাজমুল হক উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের যোগীরসিট গ্রামের কৃষক মোছলেম উদ্দিনের ছেলে। ধান ক্ষেতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি ছাড়াতে বাধা দেওয়ায় বিরোধের জেরে একই গ্রামের স্বপন মিয়ার ছেলে আল আমিন (১৯) ধারালো ছুরি দিয়ে নাজমুল হকের পেটে একাধিক আঘাত করে ভুরি বের করে ফেলে। এসময় কৃষক মোছলেম উদ্দিন (৫৫) এবং তার স্ত্রী ফেরদৌসি খাতুনকেও (৫২) পিটিয়ে আহত করে তার স্বজনেরা।

অভিযুক্তরা হলেন উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের যোগীরসিট গ্রামের স্বপন মিয়ার ছেলে আল আমিন (১৯), বাবুল মিয়ার ছেলে রাকিব (২৫) এবং ফেরদৌস মিয়া (১৮), মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে ওমর ফারুক মিয়া (৪০)। ঘটনার পর থেকে আসামীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, আহতের ঘটনার পরপর যদি পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করতো তাহলে আসামীদের বসতবাড়ীতে আগুণ দেয়ার ঘটনা ঘটতো না। আহত নাজমুল ময়মনসিংহ মেডকেল কলেজ হাসাপাতালে ৮দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার দিবাগত রাতে তার মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১০ মে) রাতে গ্রামের বাড়িতে নাজমুলের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়। দাফনের পূর্বে জানাজায় উপস্থিত মুসল্লিদের উস্কে দিয়ে অনেকে বক্তব্য দেয়। দাফন সম্পন্ন হওয়ার পরই উত্তেজিত এলাকাবাসী আসামী আল আমিনের বাড়ি, তার চাচা বাবুল ও স্বপন মিয়ার বসতবাড়িতে আগুন জালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। বাড়ি তালাবদ্ধ থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে আগুনে বসতঘরে থাকা সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।

মফিজ উদ্দিনের স্ত্রী সায়মন নেছা বলেন, শুক্রবার রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাজমুল মারা যায়। এ ঘটনায় আমার তিন সন্তানসহ নাতিদের আসামি করার খবর পেয়ে তাঁরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ভয়ে আমি বাড়িতে তালাবদ্ধ করে চলে আসি। আমরা কয়েকজন নারী বাড়িতে এসে দেখি আমাদের তিনটি বাড়ির ঘরে থাকা সকল মালামাল ও আসবাবাপত্র আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার ছেলে আর নাতিরা খুন করলে তাঁদের বিচার হবে। কিন্তু আমাদের বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দিল কেন?

নিহতের চাচি শারমিন আক্তার বলেন, আমাদের ছেলেকে হত্যা করে মামলা থেকে বাঁচার জন্য আসামিরা পরিকল্পিতভাবে তাঁদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। আমরা কেন আগুন দিতে যাব। আমরা তো আমাদের ছেলের চিন্তায় আছি।

কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ((ইউপি মেম্বার) মোমেনুল কাদের বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখি তিনটি বাড়ীর সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বাদী-বিবাদীরা একে অপরকে দোষারোপ করছে। বিষয়টি আমি পুলিশকে জানিয়েছি।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, নাজমুলকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা রুজু হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১ মে) সকালে উপজেলার যুগিরছিট গ্রামে ধানের জমিতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি ছাড়তে বাধা দেয়ার জেরে আল আমিন ও নাজমুলের মাধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে আল আমিন নাজমুলের পেটে ছুরিকাঘাত করলে তার নাড়ি-ভুড়ি বেরিয়ে যায়। নাজমুলের চিৎকার শুনে তার মা ও বাবা বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাদেরকেও ছুরিকাঘাতে আহত করে আল আমিন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় শুক্রবার (১০ মে) রাতে তার মৃত্যু হয়।


এস এম জহিরুল ইসলাম, শ্রীপুর প্রতিনিধি
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন