শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

ঢাকুরিয়া ইউনিয়নে ডিলারের বিরুদ্ধে সারের দুর্নীতির অভিযোগ

ঢাকুরিয়া ইউনিয়নে ডিলারের বিরুদ্ধে সারের দুর্নীতির অভিযোগ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া ইউনিয়নে কৃষকদের প্রাপ্য সরকারি সার বিতরণে চলছে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসব। ইউনিয়নের অনুমোদিত সার ডিলার সোহেল হোসেন দিনের আলোয় নয়, রাতের আঁধারে গোপনে বস্তার পর বস্তা সার সরিয়ে নিচ্ছেন—যা স্থানীয় কৃষকদের প্রাপ্য ছিল।

সাম্প্রতিক ১০ মে দুপুরে পরিষদ বন্ধ থাকা অবস্থায় দুই বস্তা সার ডিলার সোহেল পরিষদ থেকে সরিয়ে নেন। সার পরিবহনের জন্য ডিলারের ভ্যানে তা তোলা হয় গ্রাম পুলিশ মহাদেব বাবুর উপস্থিতিতে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহাদেব জানান, “ব্লক সুপারভাইজার কামনাশীষ আমাকে ফোনে বলেছে দুই বস্তা সার দিয়ে দিতে।”

তবে পরে সাংবাদিক পরিচয়ে ফোনে কথা হলে ব্লক সুপারভাইজার প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে বলেন, “সার জয়পুর গ্রামে বিতরণের জন্য পাঠানো হয়েছে।” কিন্তু সার বহনকারী চালক আর্সাব আলী জানান, তিনি সার সোহেল ডিলারের দোকানে পৌঁছে দিয়েছেন, জয়পুরে নয়।

এখানেই শেষ নয়। ঢাকুরিয়া বাজারের ফজরের নামাজপাঠরত একজন ব্যবসায়ী রফিকুল গাজী জানান, “সম্প্রতি ফজরের আযানের পরপরই আমি দেখি, দুইটি আলমসাধু গাড়িতে করে ৫০ থেকে ৬০ বস্তা সার ডিলার সোহেল সরিয়ে নিচ্ছেন। এটি আমি নিজ চোখে দেখেছি।” তিনি আরও বলেন, “এই সার ছিল ঢাকুরিয়া ইউনিয়নের কৃষকদের জন্য। অথচ তা অন্যত্র মোটা অংকের টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।”

এ ব্যাপারে ঢাকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অলোক কুমার অধিকারী বলেন, “পরিষদ বন্ধ থাকলে এমন কার্যক্রম হওয়ার কথা নয়। আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। আমি ব্লক সুপারভাইজারের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।”

কী বলছে আইন:

দণ্ডবিধি ৪০৫/৪০৬ ধারা: সরকারি সম্পদ অপব্যবহার ও বিশ্বাসভঙ্গ।

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ (ধারা ১৯): ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত লাভ নেওয়া।

সার বিতরণ নীতিমালা: কৃষকদের তালিকা অনুযায়ী স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বিতরণ করতে হবে।

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯: পরিষদের সম্পদ অনুমোদন ব্যতীত স্থানান্তর দণ্ডনীয় অপরাধ।

এই ঘটনাগুলো স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, কিছু অসাধু ডিলার ও কর্মকর্তার যোগসাজশে কৃষকদের হক লুটে নিচ্ছেন তারা। সরকারি তহবিল ও সম্পদের এমন লুটপাট চলতে থাকলে একদিকে যেমন কৃষকের ক্ষতি, তেমনি সরকারের উদ্দেশ্যও ব্যর্থ হবে।

স্থানীয়দের দাবি:

দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হোক। কৃষকদের প্রাপ্য সার যেন নির্ভরযোগ্য উপায়ে, স্বচ্ছভাবে তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয় এটাই এখন সময়ের দাবি।


প্রতিনিধি-যশোর
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন