সাভারে গাছে বেঁধে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে নির্যাতন


সাভারে গাছে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় এক যুবককে তিন ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করেছে বখাটেরা। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়জনকে থানায় পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
রবিবার(১৮মে)সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)জুয়েল মিঞা।
তিনি বলেন,প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে একজন যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতন করা হলো কিন্তু এই ঘটনা চলাকালীন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানাকে অবহিত করেনি।
মূলত গত শনিবার বিকেল ৫টার দিকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কয়েকজন ব্যাক্তি ওই যুবককে চুর অপবাদে মারতে মারতে রাস্তার পাশে অবস্থানরত ২০/২৫ জন বখাটেদের কাছে তুলে দেয়।এ সময় বখাটেরা একটি মেহগনি গাছে বেঁধে দফায় দফায় মারধর করে। এ বিষয়টি স্থানীয় গনমাধ্যমকর্মীদের নজরে আসলে তারা পুলিশকে খবর দিলে রাত ৮টার দিকে সাভার মডেল থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার উপ পরিদর্শক চম্পক বড়ুয়া দৈনিক নতুন কাগজ কে বলেন, নির্যাতিত যুবকের নাম অভিজিৎ দে (৩৪),সে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার সুলতানপুর এলাকার কমল কান্তি দে'র পুত্র।
ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন চোর অপবাদ দিয়ে তাকে মারধর শুরু করেন। পরে স্থানীয় যুবকদের হাতে তুলে দেন। ওই ব্যক্তি সন্দেহ করেন, তিনি বাচ্চা চুরি করতে হাসপাতালে ঢুকেছিলেন।
তবে, অভিজিৎ মানসিক ভারসাম্যহীন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। তাদের মতে, অভিজিৎ নিজের নাম-ঠিকানা বলতে পারলেও তার আচরণ স্বাভাবিক মানুষের মতো না।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আশেপাশের চা দোকানিদের ভাষ্যমতে, অনেক দিন থেকে থানার পাশে, ডাক বাংলো চত্বর, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও আশেপাশের চায়ের দোকানে তারা অভিজিৎকে দেখছেন। তারাও মনে করেন, অভিজিৎ মানসিক ভারসাম্যহীন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক রোগীর স্বজন রবিন বলেন, ‘গত রাতে বৃষ্টি শুরু হলে ওই যুবক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আশ্রয় নেন। এরপর দ্বিতীয়তলায় গিয়ে খাবার খুঁজতে শুরু করলে রোগীর স্বজনরা তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেন।’ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আবারও ওই যুবক হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় উঠলে ইস্রাফিল নামে এক ব্যক্তি ও তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন ওই যুবককে মারধর শুরু করে। তারা দাবি করেন, ওই যুবক বাচ্চা চুরি করতে এসেছেন।
প্রত্যক্ষদর্মীরা আরও জানান, মারতে মারতে ওই যুবককে হাসপাতালের নিচে নিয়ে এলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে বসে থাকা ২০-২৫ জন যুবক তাকে ডাক বাংলোর সামনের একটি গাছে বেঁধে মারধর শুরু করেন। মরধরের পাশাপাশি তারা ওই যুবকের শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা ও পরে থাকা লুঙ্গিতে আগুন ধরিয়ে দেন।
পুলিশ আরও জানায়‘প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ওই যুবককে পুলিশ দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে। এবং নির্যাতনকারী কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা থানায় এনেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালে দায়িত্বরত ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার (ইএমও) ডা. আবিদুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি কেউ আমাদের জানায়নি।’
যোগাযোগ করা হলে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদ আল হাসান বলেন, ‘ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসারের দায়িত্ব ছিল তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা। এমনকি আমাকেও বিষয়টি জানানো হয়নি।’
‘খোঁজ-খবর নিয়ে দেখবো, আমাদের কারও গাফিলতি থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে,’ বলেন তিনি।
মোঃ সাইদুল আলম তৌহিদ, সাভার
