বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

‘বর্বরতার বলি ৩ হাজার ৫৭টি কবর খনন কারী মনুর ঘোড়া’

‘বর্বরতার বলি ৩ হাজার ৫৭টি কবর খনন কারী মনুর ঘোড়া’
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

যেখানেই মানুষের মৃত্যুর সংবাদ পান সেখানেই নিজের বাহন ঘোড়ায় ছুটে চলেন মনু মিয়া। মানুষের শেষ ঘর তৈরির কাজ করেন তিনি। বিনিময় নেন না কিছুই। মানুষের শেষ ঠিকানার ঘর তৈরি করেই পরম তৃপ্তি পান গোর খোদক মনু মিয়া। এভাবেই কবর খননের কাজ করে তিনি পার করে দিয়েছেন তার ৬৭ বছরের জীবনের সুদীর্ঘ ৪৯ বছর। এ পর্যন্ত খনন করেছেন ৩ হাজার ৫৭টি কবর।

কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর উপজেলা ইটনার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মনু মিয়া। সুখ দুঃখের সাথী তার প্রিয় বাহন ঘোড়া। এটা দিয়েই তিনি চষে বেড়িয়েছেন দুর্গম হাওরের গ্রাম। পরোপকারী এই মানুষটি জীবনের অধিকাংশ সময় দিয়েছেন মানবতার কল্যাণে।

জানা যায়, দূরের যাত্রায় দ্রুত পৌঁছাতে নিজের ধানীজমি বিক্রি করে বেশ কয়েক বছর আগে কিনেছেন একটি ঘোড়া। এই ঘোড়ার পিঠে তিনি তুলে নেন তার যাবতীয় হাতিয়ার-যন্ত্র। সেই ঘোড়ায় সওয়ার হয়েই শেষ ঠিকানা সাজাতে মনু মিয়া ছুটে চলেন গ্রাম থেকে গ্রামে। ঘোড়াটিই যেন তার বয়সের বাধা অতিক্রম করে দিয়ে তাকে সচল রেখে চলেছিল। জীবনভর এ কাজটি করতে গিয়ে নিজের দিকেই খেয়াল নেয়া হয়নি তার। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা জটিল রোগ। রোগে কাবু হয়ে সম্প্রতি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি।

এ রকম পরিস্থিতিতে গত ১৪ মে তাকে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই এক রকম মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা চলছে নিঃসন্তান মানুষটির। স্ত্রী রহিমা বেগম জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা স্বামীর পাশে রয়েছেন ছায়ার মতো। মনু মিয়ার এমন সংকটকালেই বর্বরতার বলি হয়েছে তার প্রিয় ঘোড়াটি। বাড়িতে মনু মিয়া ও তার স্ত্রী রহিমা বেগমের অনুপস্থিতিতে অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে ঘোড়াটি। তিনদিন ধরে গ্রামবাসী কারও নজরে পড়েনি ঘোড়াটি। হয়তো মালিক মনু মিয়ার খুঁজে ঘোড়াটি পাগলপ্রায় হয়ে এদিক ওদিক খোঁজ করছিল৷

শুক্রবার সকালে পার্শ্ববর্তী মিঠামইন উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নের হাশিমপুর ছত্রিশগ্রাম থেকে গ্রামবাসীর কাছে একটি ফোনকলে আসে দুঃসংবাদটি। হাশিমপুর ছত্রিশ গ্রামের একটি মাদ্রাসার পাশের জমির পানির মধ্যে ঘোড়াটি মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান আলগাপাড়া গ্রামের তিন তরুণ-যুবক। তারা গিয়ে মৃত ঘোড়াটিকে দেখে হতবিহ্বল হয়ে যান। বুকে ধারাল অস্ত্রের আঘাতে নিথর হয়ে পড়ে রয়েছে মনু মিয়ার প্রিয় ঘোড়াটি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মনু মিয়ার শারীরিক ও মানসিক অবস্থার কথা ভেবে স্ত্রী ও স্বজনেরা তার কাছে গোপন রেখেছেন নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া তার ঘোড়াটির কথা।

মোবাইল ফোনে মনু মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, উনার অবস্থা ভালো না। একমাত্র আল্লাহ্‌ পাকের রহমতেই উনি সুস্থ হতে পারেন। উনি জীবনে কারও কোনো ক্ষতি করেননি। এতোদিন জানতাম, উনাকে মানুষ ভালোবাসে। উনার এমন খারাপ অবস্থায় কী করে এমনভাবে উনার প্রিয় ঘোড়াটিকে মানুষ মেরে ফেলতে পারলো! এই খবরটা আমরা উনাকে দিলে উনি কোনোভাবেই সহ্য করতে পারবেন না।

এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মুকিত সরকার জানান, বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেবেন।


মিয়া মোহাম্মদ ছিদিক, কটিয়াদী প্রতিনিধি
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন