শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

ব্যাংকিং জটিলতায় আখাউড়া দিয়ে মাছ রফতানি বন্ধ

ব্যাংকিং জটিলতায় আখাউড়া দিয়ে মাছ রফতানি বন্ধ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

ভারতের হঠাৎ নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে এবার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মাছ রফতানি বন্ধ রেখেছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। ব্যাংকিং লেনদেনে জটিলতা ও অনিশ্চয়তার কারণে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বুধবার (২১ মে) সকাল থেকে মাছ রফতানি কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া।

তিনি বলেন, “ভারতের নিষেধাজ্ঞার পর ব্যাংকিং লেনদেনের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রফতানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

এর ফলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থেকে ভারতে নিয়মিত যে পরিমাণ মাছ রফতানি হতো, তা আপাতত স্থবির হয়ে গেছে। এতে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মাছ চাষিরাও।

তিনি জানান, এক্সপোর্ট পারমিট (ইএসপি) জটিলতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় মাছ রফতানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।

ফারুক মিয়া বলেন, ‘আমাদের এক্সপোর্ট পারমিট (ইএসপি) জটিলতার কারণে আজকে আমরা এ পথে আগরতলায় মাছ রফতানি করতে পারছি না। তবে আশা করছি, সমস্যা সমাধান হলে আগামীকাল সকাল থেকে আবারও মাছ রফতানি স্বাভাবিক হবে।’

এদিকে ভারত সরকার হঠাৎ করে বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে ছয়টি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতমুখী রফতানি বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। নিষিদ্ধঘোষিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে—বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, প্লাস্টিকসামগ্রী, সুতা ও সুতার উপজাত এবং আসবাবপত্র। এর মধ্যে তৈরি পোশাক ও কাঠের আসবাব ছাড়া বাকি সব পণ্যই নিয়মিতভাবে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে রফতানি হতো।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ভারতে ৪২৭ কোটি ৮৮ লাখ ৭২ হাজার ৪৩০ টাকার পণ্য রফতানি হয়। আর চলতি অর্থবছরে গেলো এপ্রিল পর্যন্ত রফতানি হয় ৪৫৩ কোটি ১ লাখ ৯৬ হাজার ৭৯৩ টাকার পণ্য। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট, প্লাস্টিক, ভোজ্যতেল, তুলা, প্রক্রিয়াজাত খাবার, মেলামাইনসামগ্রী ও শুঁটকি।

স্থলবন্দরের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, হিমায়িত মাছের পর সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় প্লাস্টিক পণ্য, পিভিসি সামগ্রী, চিপস, বিস্কুট, ফলের স্বাদযুক্ত জুস ও তুলা। প্রতিদিন প্রায় ৪০-৪৫ লাখ টাকা মূল্যের এসব পণ্য রফতানি হয় ভারতে। ফলে এসব পণ্য আমদানি নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ায় রফতানি বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মূলত ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে ভারতের সঙ্গে চলা কূটনৈতিক টানাপড়েনের কারণেই দেশটির সরকার আমদানির সুযোগ সীমিত করেছে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের। যা দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার দাবি তাদের।

স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান জানান, আজকে সকাল থেকে মাছের কোনও গাড়ি বন্দরে আসেনি। সিমেন্ট ও ভোজ্যতেল নিয়ে ১১টি গাড়ি বন্দরে প্রবেশ করেছে। যা আগরতলায় রফতানি হবে।

প্রসঙ্গত, দেশের অন্যতম বৃহৎ ও শতভাগ রফতানিমুখী আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন হিমায়িত মাছ, সিমেন্ট, ভোজ্যতেল, প্লাস্টিক, তুলা ও খাদ্যসামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি হয় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায়। সেখান থেকে রফতানিকৃত পণ্য সরবরাহ করা হয় দেশটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি অঙ্গরাজ্যে।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন