বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj

দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন নাঙ্গলকোটের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ

দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন নাঙ্গলকোটের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সাবেক পলাতক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামালের প্রধান খলিফা খ্যাত দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা ইউসুফ ভূঁইয়ার বৈবাহিক স্বর্ণ আটানব্বই তোলা। যাহা তার নির্বাচনী হলফনামায় দেখা যায়। দুর্নীতিবাজ এ জনপ্রতিনিধি স্থাবর অস্থাবর ও নগদ টাকা সহ প্রায় শতকোটি টাকার মালিক। আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর অনেকেই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে, আবার অনেকেই গ্রেফতার এড়াতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে । 

এমন পরিস্থিতিতে ইউসুফ ভূঁইয়া টাই পরে কুমিল্লা শহর ও নাঙ্গলকোট এলাকায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, ডেভিল শিকারীরা তাকে দেখছে না? 

ইউসুফ অপরিচিত কেউ না। লোটাস কামালের আশির্বাদে বিনা ভোটে দুই বার নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান। শেষের দলীয় মনোনয়ন দিয়ে প্রশাসনিক যন্ত্রে উপজেলা চেয়ারম্যান বানাতে চেয়েছিলেন কিন্ত পারেনি ।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি রাজনৈতিক ভাবেও ইউসুফকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছিলেন লোটাসকামাল। ছাত্রলীগ কমিটিতে ইউসুফ! যুবলীগ ও আওয়ামীলীগ কমিটিতেও ইউসুফ!

আওয়ামীলীগ সংগঠনের গঠনতন্ত্রকে উপেক্ষা করে লোটাস কামাল তাকে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের সেক্রেটারী পদে অধিষ্ঠিত করেছেন।

লোটাস কামালের ক্ষমতাকে পুঁজি করে ইউসুফ জিরো থেকে হিরো হয়ে নগদে ও সম্পদে  শতকোটি টাকার মালিক। ঠিকাদারীতে তার একচেটিয়া আধিপত্য। ঠিকাদার হিসেবে ব্যবহার করতেন ঠিকাদার মাহমুদুল হাসান মিয়াজী প্রকাশ কন্ট্রাকটর মাহমুদকে। ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রক মাহমুদ কুমিল্লা শহরে বসবাস করলেও গ্রামের বাড়ী একই ইউনিয়ন অর্থাত ঢালুয়া ইউনিয়ন।  

ইউসুফের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদে দলীয় মনোনয়ন বাণিজ্য করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়েছেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজের পছন্দের লোকদের টাকার বিনিময়ে ব্যবস্থাপনা কমিটিতে সভাপতি পদে দায়িত্ব দিয়েছেন । আবার তাদের দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। 

অভিযোগে আরো জানা যায়, টাকার বিনিময়ে ইউপি চেয়ারম্যান পদে যাদের দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে তাদেরকে পাশ করিয়ে আনতে নানারকম অপচেষ্টারও কমতি ছিল না ।


সূত্র বলছে, ইউসুফ বিশাল সন্ত্রাসী হেলমেট বাহিনী নিয়ে  ২০১৮ সালে ইউপি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীক প্রার্থী উপজেলার দৌলখাঁড় ইউপির মোশারফ হোসেন মুশু, বটতলী ইউপির বিএনপি প্রার্থী সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রার্থীদের বাড়ীঘর ও অফিস ভাঙচুর করেছে । 

অভিযোগ আছে, ২০১৬ সালে একদল সন্ত্রাসী নিয়ে নিজ ইউনিয়ন ঢালুয়া বাজার সিএনজি স্ট্যান্ড দখল নেয়ার চেষ্টা কালে মোটর শ্রমিকদের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে । এতে তিনি কিছুটা আহত হয়। ইউসুফ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে দেরী করেনি। প্রচুর মানুষকে আসামী করে হয়রানী ও আসামী বাণিজ্য করেও অনেক টাকা হাতিয়েছে । অপারেশন ডেভিল হান্ট চলমান। কিন্ত ইউসুফ আওয়ামীলীগ ক্ষমতামলে যেভাবে ঘুরে বেড়াতো, এখন আগের চেয়েও বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে । তাকে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে। গত কিছুদিন আগেও রাজধানীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি যুবলীগ নেতা এমরান কবিরের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে স্যুট, বুট, কোট, টাই পরে ভুরিভোজ করছে।
 
১৯৮৩ সনে জন্ম নেয়া ইউসুফ ঢালুয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯৯৭ সালে মেট্রিক ও হোমনাবাদ কলেজ থেকে ১৯৯৯ সালে মানবিকে থার্ড ডিভিশনে পাশ করে অর্থাভাবে লেখাপড়ার ইতি টেনে শ্রমিক ভিসায় মালয়েশিয়া যাবার চেষ্টা করে । টাকার অভাবে যেতে পারেনি ।

পারিবারিক ভাবে অভাব অনটনে থাকা ইউসুফ ভাইস চেয়ারম্যান হয়ে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যায়। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২০১৪ সালে প্রথম নির্বাচনী হলফনামায় দেখা যায় তেমন কোনো সম্পদ নাই এবং তেমন টাকার মালিকও না। ২য় দফায় নির্বাচনী হলফনামায় আগের তুলনায় একটু বেশি কিন্ত সর্বশেষ নির্বাচন অর্থাত ২০২৪ সালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদের হলফনামায় সম্পদের পরিমাণ ১শ গুন। প্রমাণস্বরুপ, পাশের গ্রাম বায়েরা মৌজায় তার নিজ নামে ক্রয়কৃত সম্পত্তির পরিমাণ ১একর ২৪শতাংশ এবং অন্য মৌজায় ১১শতাংশ। যার বাজার মূল্য আড়াই কোটি টাকার বেশি । 

২০১৪ সালের হলফনামায় দেখা যায় বৈবাহিক স্বর্ণালংকার ২০ ভরি। আবার ২০২৪ সালে সেটা হয়ে যায় ৯৮ ভরি? যার বাজার মূল্য ২ কোটি টাকার কাছাকাছি। বৈবাহিক স্বর্ণ দুই হলফনামায় ভিন্ন ভাবে উপস্থাপিত? পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ইউসুফ বিয়ে করেছে একটি। উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের শাহআলমের মেয়ে। সুতরাং একাধিক বিয়ের খবর তাদের জানা নাই। 

পৈত্রিকভাবে ইউসুফ দেখিয়েছেন ৫টি মত্স খামার অথচ তার পিতার কোনো খামারই ছিল না। জানা যায় তার পিতার পেশা ছিল ঢালুয়া বাজারের টোল আদায়কারী।

ঘোষণা পত্রে আরো দেখা যায় হাতে নগদ ১০লাখ, ব্যাংক জমা ২৭ লাখ ৩৩ হাজার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ১লাখ,আসবাবপত্র ১লাখ, দালান! তা ও পৈত্রিক? যাহা অবিশ্বাস্য। আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ ছেড়ে বটগাছে পরিণত হওয়া ইউসুফের ঘোষণা ছাড়াও কুমিল্লার ঠাকুর পাড়ে ৬ তলা বাড়ী, কুমিল্লায় মেডিসিন দোকান ক্রয়, লাকসামে একটা সুপার সপের মালিকানা ও ৫০ কোটি টাকার ৮টি লরি গাড়ী ক্রয়, রাজধানী উত্তরায় ৫ তলা বিশিষ্ট তিন কাঠার উপর বাড়ী নির্মাণ, ঢালুয়া ইউনিয়নের শিহর মৌজায় ১০ বিঘা জমির  উপর পুকুর খনন সহ কয়েক কোটি ব্যায়ে মাছ চাষাবাদ করেছে এবং বিভিন্ন জায়গায় স্ত্রীর নামে, ভাইয়ের নামে ও শ্বশুরের নামে সম্পদ ও সম্পত্তি ক্রয় করে রেখেছেন। দুদকে অভিযোগ দেয়া আছে, যাহা তদন্তাধীন ।

১৬ বছর ক্ষমতার মসনদে এবং লোটাস কামালের ডানে বাঁয়ে বসে নীরিহ জনসাধারণের উপর ছড়ি ঘোরানো ইউসুফ এখন দুদক ও পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে এবং জনরোষের কবল থেকে রেহাই পেতে জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেছেন । ফলস্বরুপ, পটপরিবর্তনের পর ২০-২৫টি মামলা হলেও ইউসুফ তেমন কোনো মা।


জামাল উদ্দিন স্বপন
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ

আরও পড়ুন