ইবির এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১৩ ছাত্রীর অভিযোগ


কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, বাজে ইঙ্গিত, কুরুচিপূর্ণ মেসেজ প্রদান, বিভিন্ন সময় ভিডিও কল, কল না ধরলে রেজাল্ট খারাপ করানো সহ নানাবিধ অভিযোগ উঠেছে। গত ২২ জুন বিভাগের সভাপতি বরাবর এসকল অভিযোগ উল্লেখ করে লিখিত দেন বিভাগটির অন্তত ডজনখানেক ছাত্রী। একইসঙ্গে তারা তদন্তসাপেক্ষে ওই শিক্ষকের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানান। অভিযুক্ত ওই শিক্ষক বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুুল ইসলাম।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৮ জুন পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে তাকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচানোর চেষ্টায় শিক্ষকরা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া অভিযোগকারী শিক্ষার্থীদের ডেকে সমঝোতার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ওই শিক্ষক বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্রীদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ আচরণ করে আসছিল। তবে এতোদিন কেউ মুখ খোলার সাহস করেননি। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে গত ঈদুল আযহার ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার দ্বিতীয় দিন (২২ জুন) বিভাগের সভাপতি বরাবর তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য তাকে বিরত রেখেছে বিভাগটি। তবে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ছাত্রীরা। এছাড়া ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারা প্রশাসন বরাবরও লিখিত অভিযোগ করবেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগপত্র সূত্রে, ছাত্রীদের ভিডিও কল দেওয়া, কল না ধরলে রেজাল্ট খারাপ করানোর হুমকি, হোয়াটসঅ্যাপে কুরুচিপূর্ণ মেসেজ প্রদান, ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষার নম্বর কমিয়ে দেওয়া, রুমে ডেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন নিয়ে আপত্তিকর জিজ্ঞাসা, ক্লাসে সবার সামনে বিভিন্নভাবে আজেবাজে ইঙ্গিত, বিবাহিত ছাত্রীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, নিজের আন্ডারে প্রজেক্ট করতে পছন্দের ছাত্রীদের বাধ্য করা ও ছাত্রীদের বডি শেমিং সহ নানাভাবে হেনস্তা করেন শিক্ষক আজিজুুল ইসলাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বলেন, ওই শিক্ষকের দ্বারা হেনস্তার শিকার ছাত্রীদের অনেকেই বিবাহিত হওয়ায় তারা তাদের পরিবারের কথা ভেবে এতোদিন মুখ খোলেননি। কেউ কেউ তার যন্ত্রনায় সুইসাইডাল অ্যাটেমপ্ট নিতে চেয়েছিল। সাময়িক অব্যাহতি কোনো সমাধান নয়। আমরা তার স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুুল ইসলাম বলেন, আমি আপাতত মেন্টালি আপসেট আছি। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ. কে. এম নাজমুল হুদা বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরে আমরা নিয়মানুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে আমরা তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। আপাতত পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তিনি বিভাগের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ মে ২৬৮ তম সিন্ডিকেট সভায় ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামকে চাকরিচ্যুত করে প্রশাসন। তার বিরুদ্ধে সমকামিতা, যৌন হয়রানি, শিক্ষার্থী হেনস্তা, ছাত্রলীগের মিছিলে জোর করে পাঠানোসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি।
