ফোনালাপ ফাঁস: থাই প্রধানমন্ত্রী সাময়িক বরখাস্ত


কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে একটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপ ঘিরে বিতর্কের জেরে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে দেশটির সাংবিধানিক আদালত।
মঙ্গলবার আদালত এই আদেশ দেয়। তবে বরখাস্তের পরও পেতংতার্ন থাইল্যান্ডের সংস্কৃতি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে।
এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশটির সাংবিধানিক আদালতে একটি পিটিশন দায়ের করা হয়। আদালত তা গ্রহণ করে এবং মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়।
সাংবিধানিক আদালত ৭-২ ভোটে পেতংতার্নকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাকে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন উপ প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুংরুনগ্রুয়াংকিত।
পেতংতার্ন চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত হলে তিনি হবেন ক্ষমতাধর সিনাওয়াত্রা পরিবারের তৃতীয় সদস্য, যিনি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতা হারাবেন। দুই দশক ধরে থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে এই পরিবার ব্যাপক প্রভাবশালী।
ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপে পেতংতার্ন কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনকে ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করেন এবং সীমান্ত সংঘর্ষে থাই সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন।
ফোনালাপে তাকে বলতে শোনা যায়, তিনি দেশীয় চাপের মুখে রয়েছেন এবং হুন সেনকে বিরোধী পক্ষের কথা না শোনার অনুরোধ করেন। এই কথোপকথনে তিনি আরও বলেন, আপনার যদি কিছু চাওয়া থাকে, আমাকে বললেই হবে, আমি দেখবো।
এমন বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর বিরোধীরা অভিযোগ তোলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে আপস করেছেন।
এ ঘটনা সামনে আসার পর থাইল্যান্ডের সরকার সমর্থক জোটের অন্যতম শরিক ভূমজাইথাই পার্টি জোট ছেড়ে বেরিয়ে যায়। এর ফলে পেতংতার্নের নেতৃত্বাধীন ফেউ থাই পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা ঝুঁকিতে পড়ে। পাশাপাশি, তার জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। বর্তমানে তিনি পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।
ফোনালাপ ফাঁসের পর পেতংতার্ন এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তিনি কূটনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন এবং এতে কোনো আনুগত্য প্রকাশ করা হয়নি। পাশাপাশি তিনি দাবি করে বলেন, এটি একটি ব্যক্তিগত আলাপ ছিল যা কখনোই জনসম্মুখে আসা উচিত ছিল না।
মাত্র ১০ মাস আগে ক্ষমতায় আসেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে ৩৮ বছর বয়সী পেতংতার্ন। থাইল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী প্রধানমন্ত্রী তিনি এবং তাঁর ফুপু ইংলাক সিনাওয়াত্রার পর দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রীও তিনি। গত বছর পেতংতার্নের পূর্বসূরি স্রেত্তা থাভাইসিন বরখাস্ত হন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার মন্ত্রিসভায় কারাভোগ করা এক সাবেক আইনজীবীকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। স্রেত্তা বরখাস্ত হওয়ার কয়েক দিন পরই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন পেতংতার্ন।
এক বছরেরও কম সময়ের এই ক্ষমতায় দুর্বল অর্থনীতি চাঙা করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। তবে এর মধ্যেই তিনি জনপ্রিয়তায় বড় ধাক্কা খেয়েছেন। গত সপ্তাহের এক জরিপে দেখা যায়, তাঁর জনপ্রিয়তা নেমে এসেছে মাত্র ৯ দশমিক ২ শতাংশে, যেখানে মার্চে ছিল ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এটি দীর্ঘদিন ধরে নানা সামরিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের সময়ের এই সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে।
