পাকিস্তান সফরের আগে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ, ইতিহাস গড়ল আমিরাত


পাকিস্তানের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আরব আমিরাতে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। পরিকল্পনা ছিল খানিকটা অনুশীলনের পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস অর্জনেরও। সেই লক্ষ্যেই আয়োজন করা হয়েছিল আমিরাতের বিপক্ষে একটি সংক্ষিপ্ত তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ।
কিন্তু র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে থাকা আমিরাতের বিপক্ষে ঠিক উল্টো চিত্রই ফুটে উঠেছে মাঠে। প্রত্যাশার বদলে পারফরম্যান্সে ধস নেমেছে লিটন দাসদের। তিন ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হেরে গিয়েছে বাংলাদেশ, যার শেষটি শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
মরুর দেশে ক্রিকেটের অচেনা চিত্রে যেন নিজেরাই হারিয়ে গেল টাইগাররা। সহযোগী দেশগুলোর বিপক্ষে হারের তালিকায় আরও একটি অধ্যায় যোগ হলো বাংলাদেশের নামে। ব্যাটিং-বোলিং—দুই বিভাগেই ছিল ছন্দহীনতা, আর সেটাই সিরিজ হারার প্রধান কারণ। প্রস্তুতি নিতে গিয়ে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে দল, পাকিস্তানের মতো শক্ত প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হওয়ার আগে যা নিঃসন্দেহে বড় এক সতর্কবার্তা।
আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রস্তুতির জন্য গড়া হয়েছিল সংক্ষিপ্ত টি-টোয়েন্টি সিরিজ। শুরুতে দুই ম্যাচ পরিকল্পনায় থাকলেও পরে তা রূপ নেয় তিন ম্যাচের সিরিজে। প্রথম ম্যাচে ১৯১ রান করে জেতায় মনে হয়েছিল, আত্মবিশ্বাস ফিরছে টাইগারদের। কিন্তু বাস্তবতা অন্যরকম—দ্বিতীয় ম্যাচে ২০৫ রান করেও হার, আর শেষ ম্যাচে ১৬২ রান করে আবারও মুখ থুবড়ে পড়া।
বুধবার শারজায় সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ৭ উইকেটে হেরে সিরিজটাও ২-১ ব্যবধানে তুলে নিয়েছে স্বাগতিক আমিরাত। এই জয় শুধু ম্যাচজয় নয়, ইতিহাস গড়ারও। আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশ হিসেবে প্রথমবারের মতো তারা পূর্ণ সদস্য বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০’র বেশি রান তাড়া করে জিতেছে। পাশাপাশি এটি টেস্ট খেলুড়ে দলের বিপক্ষে তাদের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়। এর আগে ২০২১ সালে তারা হারিয়েছিল আয়ারল্যান্ডকে।
বাংলাদেশের জন্য এই হারের চেয়ে বড় দুশ্চিন্তার বিষয় হলো—ব্যাটিং-বোলিং উভয় বিভাগেই পরিকল্পনার অভাব স্পষ্ট। দ্বিতীয় ম্যাচে ২০৫ রানের লক্ষ্যও যথেষ্ট হয়নি, আর তৃতীয় ম্যাচে মাত্র ১৬২ রান করেই জয়ের আশা করা অবাস্তব ছিল। বোলাররা যেন পুরোপুরি ছন্দহীন—শরিফুল, হাসান মাহমুদ, তানজিম হাসান সাকিবের মতো তরুণরা ভুলে গেছেন লাইন-লেন্থ কাকে বলে। স্লো পিচেও গড়পড়তা বোলিংয়ের কারণে প্রতিপক্ষের আলিশান শরাফু ও আসিফ খান বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন। মোস্তাফিজুর রহমানের অনুপস্থিতি ছিল স্পষ্ট।
ব্যাটিংও ছিল আরও হতাশার। সিরিজে একমাত্র বড় ইনিংস এসেছে প্রথম ম্যাচে পারভেজ ইমনের সেঞ্চুরি থেকে। বাকি ম্যাচগুলোয় লিটন দাস, তাওহীদ হৃদয়, শামীম হোসেন, শেখ মেহেদী—সবাই ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ। শেষ ম্যাচে তো মাত্র ৮৪ রানে ৮ উইকেট পড়ে যায়। কিছুটা লড়াই করে জাকের আলী অনিক, হাসান ও শরিফুল স্কোরটাকে ১৬২-তে নিয়ে যান। কিন্তু তা ছিল না যথেষ্ট।
সিরিজ শেষে মাঠের ফলাফলের পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসেও বড় ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের মাটিতে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে এমন পারফরম্যান্স আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
২৪ মে পাকিস্তানে তিন ম্যাচের সিরিজে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। মরুর বুকে ছন্দ হারিয়ে আসা দলটি সেখানেই ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না, সেটিই এখন প্রশ্ন। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা অপেক্ষায়, নিজেদের প্রিয় দলের জবাবটা কেমন আসে — ব্যর্থতার ধুলা ঝেড়ে নতুন করে পথচলার!
