মেসির বেতনে হার ২১ দলের সম্মিলিত ব্যয়


মাঠে তার জাদু যেমন চোখ ধাঁধানো, তেমনি মাঠের বাইরেও তিনি রাজত্ব করছেন আয় ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে। লিওনেল মেসি আবারও যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার (এমএলএস)-এ সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলার হিসেবে নাম লেখাতে যাচ্ছেন টানা তৃতীয়বারের মতো।
ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলা এই আর্জেন্টাইন তারকার বার্ষিক আয় ২০,৪৪৬,৫৫৭ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৪৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই বিশাল অঙ্কের আয় শুধু লিগের অন্যান্য খেলোয়াড়দের নয়, বরং ২১টি দলের সম্মিলিত খেলোয়াড় বেতনের চেয়েও বেশি!
এই চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার (এমএলএস) যেন এখন একাই ‘মেসিময়’। শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও নিজের রাজত্ব দেখাচ্ছেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার লিওনেল মেসি। প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদ্য প্রকাশিত বেতন তালিকা বলছে, এমএলএসে এমন কোনো খেলোয়াড় নেই, এমনকি কোনো ক্লাবও নেই—যাদের সম্মিলিত খরচ মেসির ব্যক্তিগত আয় ছাড়িয়ে গেছে!
গতকাল (বুধবার) প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ইন্টার মায়ামির মহাতারকার বার্ষিক বেতন ১২ মিলিয়ন ডলার। তবে এখানেই শেষ নয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিপুল মার্কেটিং চুক্তি, এজেন্ট ফি ও পারফরম্যান্স বোনাস—সব মিলিয়ে তার বার্ষিক আয় দাঁড়িয়েছে ২০.৪৪ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ২৪৮ কোটি টাকা! আর এই চুক্তির সবটাই লিগ কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে অনুমোদিত।
মেসির জন্যই রেকর্ড বাজেট
এত বড় অঙ্কের পারিশ্রমিক দিতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই রেকর্ড গড়েছে ইন্টার মায়ামি। একক ক্লাব হিসেবে এমএলএসে এবার সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে ডেভিড বেকহ্যামের দল। খেলোয়াড় বেতন বাবদ তাদের মোট বার্ষিক ব্যয় এখন ৪৬.৮ মিলিয়ন ডলার—বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৬৮ কোটি টাকা!
এই ব্যয়ের প্রায় অর্ধেকই গেছে শুধু মেসির পেছনে, যা এক কথায় নজিরবিহীন। এমনকি গত মৌসুমের তুলনায় শুধু বেতনের খাতেই অন্তত ৫ মিলিয়ন ডলার বেশি খরচ করেছে মায়ামি।
বাকি ক্লাবগুলো অনেক পেছনে
মেসির ক্লাব যেখানে একাই ৪৬ মিলিয়ন ছুঁইছুঁই, সেখানে এমএলএসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয়কারী ক্লাব টরোন্টো এফসি—মাত্র ৩৪.১ মিলিয়ন ডলার। এরপর আছে আটলান্টা ইউনাইটেড (২৭.৬ মিলিয়ন), সিনসিনাতি (২৩.২ মিলিয়ন), এলএ গ্যালাক্সি (২২.৯ মিলিয়ন) এবং লস অ্যাঞ্জেলস এফসি (২২.৪ মিলিয়ন)। তুলনায় মন্ট্রিল ক্লাব খরচ করেছে মাত্র ১২ মিলিয়ন ডলার!
শীর্ষ ১০ বেতনভোগী ফুটবলার:
লিওনেল মেসি (ইন্টার মায়ামি) – $20.44 মিলিয়ন
লোরেঞ্জো ইনসিগনে (টরোন্টো) – $15.4 মিলিয়ন
সার্জিও বুসকেটস (ইন্টার মায়ামি) – $8.75 মিলিয়ন
মিগুয়েল আলমিরন (আটলান্টা) – $7.87 মিলিয়ন
হার্ভিং লোজানো (সান দিয়েগো) – $7.63 মিলিয়ন
ফেদেরিকো বার্নাদেশ্চি (টরোন্টো) – $6.29 মিলিয়ন
এমিল ফর্সবার্গ (নিউইয়র্ক রেডবুলস) – $6.02 মিলিয়ন
জর্দি আলবা (ইন্টার মায়ামি) – $6.00 মিলিয়ন
রিকুই পুইগ (এলএ গ্যালাক্সি) – $5.78 মিলিয়ন
জনাথন বোম্বা (শিকাগো) – $5.58 মিলিয়ন
বেতনের স্রোত বাড়ছেই
এমএলএসে বর্তমানে মোট ৯০২ জন ফুটবলার চুক্তিবদ্ধ। তাদের সম্মিলিত বার্ষিক বেতন এখন ৫৮৬ মিলিয়ন ডলার, যা গত মৌসুমের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালে এই খরচ ছিল ৩৯৪ মিলিয়ন, আর ২০২৩ সালে ৪৬০ মিলিয়ন ডলার।
কেন এত খরচ?
এই ব্যয়ের পেছনে মূল চালিকাশক্তি ‘মেসি ইফেক্ট’। শুধু ফুটবল নয়, ব্র্যান্ড ভ্যালু, টিভি সম্প্রচার, স্পনসরশিপ, জার্সি বিক্রি—সব ক্ষেত্রেই মেসি এনে দিয়েছেন বিপুল রাজস্ব। ফলে মেসির উপস্থিতি যেমন খরচ বাড়িয়েছে, তেমনি লিগের বাজারমূল্যও নিয়ে গেছে নতুন উচ্চতায়।
সংক্ষেপে বললে: মেসি এখন শুধু একজন ফুটবলার নন, এমএলএসের অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু। তার পেছনে অর্থ ঢালতে ক্লাবগুলোর দ্বিধা নেই, কারণ ‘মেসি মানেই লাভ’—এটা এখন প্রমাণিত বাস্তবতা।
