বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই গ্রুপের সংঘাতে উত্তপ্ত কুড়িগ্রাম


কুড়িগ্রামের রৌমারীতে সমন্বয়ক পদকে কেন্দ্র করে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর দুইটি গ্রুপের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২২ মে) উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
স্থানীয় সূত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক সাজেদুল ইসলাম সবুজ গত বুধবার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি নোটিশ পোস্ট করেন, যাতে জেলা কমিটি গঠনের বিষয়ে মতবিনিময়ের আহ্বান জানানো হয়। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তবে মতবিনিময়ের পূর্বেই শুরু হয় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী অভিযোগ তোলেন, জেলা সমন্বয়ক পরিচয়ে সাজেদুল ইসলাম সবুজ ইউনিয়ন পর্যায়ে বিভিন্ন প্রকল্পে প্রভাব খাটিয়ে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। এমনকি ছয়টি ইউনিয়নে ‘কাবিখা’ প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে তিনি ও তার অনুসারীরা ৭ লাখ টাকা করে উত্তোলন করেছেন বলেও দাবি করেন তারা। সংগঠনের অন্যতম সক্রিয় সদস্য রশিদুজ্জামান রাফি সাংবাদিকদের বলেন, “এই আন্দোলনের সূচনালগ্ন থেকে আমি যুক্ত ছিলাম।
কিন্তু কিছু নতুন মুখ, যারা আগে কখনও মাঠে ছিল না, তারা হঠাৎ করে সংগঠনের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে লেনদেন করছে। বরাদ্দের টাকা উঠিয়ে কাজ না করেও প্রকল্প সম্পন্ন দেখানো হয়েছে।”তবে রাফির এই বক্তব্য অস্বীকার করেছেন সাজেদুল ইসলাম সবুজ।
তার ভাষ্য, “বুধবার ফেসবুকে কমিটি গঠনের বিষয়ে একটি আহ্বান জানিয়ে পোস্ট দিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার সকালের মতবিনিময় শেষে হোটেলে নাস্তা করে আমি ও কয়েকজন কর্মী শহীদ মিনারের দিকে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে রঞ্জু ভাইয়ের সঙ্গে থাকা অবস্থায় রনি অশোভন আচরণ করে। আমি প্রতিবাদ করায় তারা দলবেঁধে আমার ওপর হামলা চালায়।” সংঘর্ষে আহত হন রশিদুজ্জামান রাফি, মেহেদী হাসান রনি এবং সাজেদুল ইসলাম সবুজ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষে লাঠি ও ইটের ব্যবহার হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পরে রৌমারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে।
আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে, এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে রৌমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (PIO) শামসুদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “কাবিখা প্রকল্পসহ সব সরকারি প্রকল্প বরাদ্দ ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব ইউনিয়ন পরিষদের। ছাত্র সংগঠনের কেউ প্রকল্প নিয়েছে বলে আমাদের অফিসের কোনো তথ্য নেই।”
রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “ঘটনার বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”সংগঠনের একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, তাদের দাবি শুধু অর্থবহ ও স্বচ্ছ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, যেখানে আন্দোলনের মূল চেতনা বিকৃত না হয়। তবে সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংগঠনের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম এবং অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব কাঠামো নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
সাইফুর রহমান শামিম, জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
