জনবান্ধব ইউএনও সাইফুল ইসলাম


বয়স ৫৫ ছুঁই-ছুঁই। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাঁশের লাঠিতে ভর করে এসেছেন উপজেলায়। হণ্যে হয়ে খুঁজছেন ইউএনওকে। আনসার সদস্য খবর দিলেন। ইউএনও বেরিয়ে এসে দেখা করলেন ফুলজান বিবির সঙ্গে। কথা শুনলেন। ঔষুধ খাওয়ার জন্য টাকা চাইলেন। ইউএনও ৩ হাজার টাকা দিয়ে ‘মা’ সম্বোধন করে ফুলজান বিবিকে বিদায় দিলেন। শুধু ফুলজান বিবি নয়। প্রতিদিন এমন অনেক ফুলজান বিবি, করিমন বিবি ও রহিম মিয়াদের পাশে দাঁড়ান রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম জয়। জনবান্ধব কার্যক্রম ও মানবদরদী হওয়ায় ইতিমধ্যে রূপগঞ্জজুড়ে তিনি মানবিক ইউএনও হিসাবে খ্যাতি কুঁড়িছেন। তিনি রূপগঞ্জে একটি ম্যাসেজ ছড়িয়ে দিয়েছেন ‘জনসেবাই জনপ্রশাসন’।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি কখনো সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে মানুষকে সচেতন করছেন। কখনো খাবার নিয়ে ছুটে গিয়েছেন হতদরিদ্র সাধারণ মানুষের কাছে। প্রতিমাসে নিজের বেতনের টাকা ব্যয় করছেন অসহায় মানুষের জন্য। উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বের পাশাপাশি একাধারে উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। কাজ পাগল মানুষ বলতে যা বোঝায় এ যেন ঠিক তাই! সকাল নয়টা থেকে শুরু করে রাত দশটা পর্যন্ত দাফতরিক কাজ করা এটা যেন তার প্রতিদিনের রুটিন। তিন দফতরের কাজের পাশাপাশিও উপজেলার বিভিন্ন হতদরিদ্র, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, গরিব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ানো প্রতিদিনের রুটিনের একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে রূপগঞ্জ ইউএনওর।
রাত দিন এভাবেই তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। যেখানেই আইনের লঙ্ঘন সেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম পরিচালনা তো রয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কৃষি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি ও বালু উত্তোলন রোধ, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অবৈধভাবে মালামাল মজুদকারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ ঘোষণা, যানজট নিরসন, খাল উদ্ধার ও মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা।
যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ও আর্তমানবতার সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ইতোমধ্যে তিনি ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন। বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলো জমকালো এবং দৃষ্টিনন্দন করে পালন করার নজির সবার মুখে মুখে। উপজেলাজুড়ে সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও তার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
তিনি যোগদানের পরে মুক্তিযোদ্ধা ও হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষায় নকলমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল অর্জনে খোঁজখবর নেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তার জুড়িমেলা ভার। অনেক গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহযোগিতা করে চলেছেন জনবান্ধব ইউএনও। তৃতীয় লিঙ্গের লোকদের সহযোগীতা ও সরকারী শিশু পরিবারের শিশুদের মাঝে নতুন জামা বিতরণ করেছেন। ইউএনও সাইফুল ইসলামের এ ব্যতিক্রম কর্মোদ্যম ও দায়িত্ববোধ এ উপজেলায় দিন দিন যোগ হচ্ছে উন্নয়নের নতুন মাত্রা। তার সততা ও কর্মদক্ষতায় পাল্টে গেছে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও সার্বিক চিত্র। কমেছে জনভোগান্তি আর বৃদ্ধি পেয়েছে জনসেবার মান।
ব্যবসায়ী মাসুম আহম্মেদ বলেন, একজন ইউএনও এতটা কাজপাগল ও জনপ্রিয় হতে পারেন তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ইউএনও সাইফুল ইসলাম। সে কারণে এ এলাকার মানুষ তাকে আস্থা ও নির্ভরতার ঠিকানা হিসেবে খুঁজে পেয়েছেন। ব্রাইট শিশু কানন স্কুলের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম কথাবার্তায় মার্জিত ও আচরণে অত্যন্ত ভদ্র এবং সৎ কাজ পাগল একজন মানুষ। অসহায়, হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে হয়ে উঠেছেন একজন মানবিক ইউএনও। হুইল চেয়ারে বসে সহায়তা নিতে আসা রহিম মিয়া বলেন, আমার দুই পা অচল। চলতে-ফিরতে পারি না। ভিক্ষা করে সংসার চালাই। মেম্বরের সহায়তা নিয়ে এখানে আইচি। ইউএনও স্যার আমাকে টিন দিয়েছে ঘর মেরামত করার লেইগ্যা। মিস্ত্রির কাজের মজুরি বাবদ চার হাজার টাকা দিয়েছে।
ইউএনও সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি কাজে বিশ^াসী। আমি মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। দেশের জন্য কাজ করাই আমার লক্ষ্য। রূপগঞ্জের মানুষের পাশে থাকবো। চেষ্টা করবো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। আমার ওপর অর্পিত সব দফতরের সরকারি নির্দেশনা সফলভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি। কোনো সমস্যা মনে হলে আমার কাছে আসুন। ভুল ত্রুটি দেখিয়ে দেন। আমি সবার সহযোগিতায় সমাধান করার চেষ্টা করব। আমার একটাই ম্যাসেজ ‘জনসেবাই জনপ্রশাসন’।
উল্লেখ্য, তিনি ৩৪তম বিসিএস অল ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের নতুন কমিটির সভাপতি হয়েছেন রূপগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম জয় (১৭৯১১)। তার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায়। তিনি একসময় রেডিও জকি ও রেডিও টুডের নিউজ রিপোর্টার ও নিউজ প্রেজেন্টার ছিলেন। তার সহধর্মিণী ফারজানা রহমান (১৭৭৩৭) বর্তমানে পাশ^বর্তী সোনারগাঁও উপজেলার নির্বাহী অফিসার। তিনিও সোনারগাঁওয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
রায়হানা সুলতানা, রূপগঞ্জ প্রতিনিধি
