রংপুর অঞ্চলে পাকা ধানে পোকার আক্রমণ, দিশেহারা কৃষক


রংপুর অঞ্চলে পাকা ধান ক্ষেতে ব্যাপকভাবে মাজরা ও কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। যা কীটনাশক ছিটিয়েও দমন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে কৃষকরা অভিযোগ করছেন। ধান কেটে ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে ক্ষেতের এমন পরিস্থিতিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।
অন্যদিকে, পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচাতে কৃষকদের কীটনাশক স্প্রেসহ সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে এ জেলায় বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এক লাখ ৩২ হাজার ৭৪৬ হেক্টর জমি। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এক লাখ ৩২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৯৮ হাজার ৪৪ টন।
চলতি মৌসুমে রংপুরে আলুর উৎপাদন ভালো হলেও আশানুরুপ দাম পাননি কৃষক। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে করা হয়েছে বোরো ধান চাষ। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু ধান পাকার শেষ মুহূর্তে এসে মাজরা ও কারেন্ট পোকার আক্রমণে কৃষককে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, এই পোকা ধান গাছের মাজা কেটে দেওয়ায় শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে গাছ মারা যাচ্ছে। যে জমিতে এই পোকা আক্রমণ করে সর্বোচ্চ তিন থেকে চার দিনের মধ্যে ক্ষেতের অধিকাংশ গাছ নষ্ট করে দেয়।
পোকার আক্রমণে বিঘার পর বিঘা জমির আধা পাকা ধান গাছ নষ্ট হলেও কোনো প্রতিকার করতে পারছেন না কৃষক। একাধিকবার বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করলেও হচ্ছে না কোনও সমাধান। চোখের সামনে নষ্ট হচ্ছে কষ্টের ফসল।
রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তামপাট এলাকার কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, চার বিঘা জমিতে ইরি-বোরো ধানের চাষ করেছেন তিনি। ফলনও হয়েছিল ভালো, কিন্তু ধান পাকার শেষ মুহূর্তে তার প্রায় দুই বিঘা জমিতে মাজরা ও কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে শেষ হয়েছে কষ্টের ফসল। একাধিকবার কীটনাশক স্প্রে করেও কোনো লাভ হয়নি বলে জানান এই কৃষক।
একই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক রফিকুল বলেন, বিভিন্ন প্রকার ওষুধ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। ৬৬ শতাংশ জমির ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে তার। জমির খড় পর্যন্ত কাজে লাগানো যাবে না।
তার মত একই অবস্থা ওই এলাকার অনেক কৃষকের। সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়ানের মমিনপুর এলাকার কৃষক আমির হোসেন বলেন, ভাই কী আর বলব, আর কয়েকদিন পরেই ধান কাটা যেত। অথচ ধানে পোকা আক্রমণ করে সব শেষ করে দিল। এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তাদের জানানো হলেও তাদের দেখা পাওয়া যায় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
সদর উপজেলার মমিনপুর ও রাজেন্দ্র ইউনিয়ন ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় আধা পাকা ধান ক্ষেতে মাজরা ও কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে।
গংগচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়ানের ছালাপাক এলাকার শরিফুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন পরেই ধান কাটা যেত। কিন্তু এর মধ্যে ক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে জমির সব গাছ সাদা হয়ে ধান চিঠা হয়ে গেছে।
রংপুর জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার গোবিন্দ প্রসাদ অধিকারী বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন এলাকার ধান ক্ষেতে মাজরা ও কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ক্ষতি ও আক্রান্ত ক্ষেতের পরিমাণ নিরুপণে কাজ চলছে।
এ ছাড়া কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
তবে ধান ক্ষেতে না যাওয়া ও খোঁজখবর না নেওয়ার অভিযোগকে কৃষকদের গতানুগতিক কথা বলে মন্তব্য করেছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
জহুরুল ইসলাম, রংপুর
