সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক আশরাফুল দুর্নীতির অভিযোগে বদলি


নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক মোঃ আশরাফুল ইসলামকে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।
গত শনিবার (২৪ মে) বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, ঢাকা-এর স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক মোছা. সেলিনা বানু স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে আশরাফুল ইসলামের বদলির নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার (২৫ মে) সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাকে অবমুক্ত করে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
নিয়োগে অনিয়ম ও বিতর্কিত কার্যক্রম: অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর উপজেলা পরিষদ পুনরায় কার্যকর হলে সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর পদ সৃষ্টির মাধ্যমে ২০১৬ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আশরাফুল ইসলামের পিতা মো. হানিফ তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী ছিলেন। সেই সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে একটি পাতানো পরীক্ষার মাধ্যমে আশরাফুল নিয়োগ লাভ করেন।
নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই তিনি উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। বিশেষ করে রাজস্ব তহবিল, উন্নয়ন তহবিল এবং প্ল্যান পাস সংক্রান্ত নথিপত্র তার হেফাজতে থাকে।
২০১৬ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে আশরাফুল ইসলাম নিজ নামে ও ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে প্রায় ১২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। কাগজে-কলমে প্রকল্প সৃষ্টি করে বিভিন্ন জনকে সভাপতি দেখিয়ে নিজেই স্বাক্ষর দিয়ে টাকা উত্তোলন করেন। অধিকাংশ প্রকল্পের কোনো নথিপত্র না থাকায় শুধুমাত্র চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এছাড়াও, বাড়ি নির্মাণের ছাড়পত্র ও কোম্পানির প্ল্যান পাসের অনুমোদনের ক্ষেত্রে তিনি ১-২ লক্ষ টাকা করে ঘুষ গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সন্তান হয়েও তিনি অল্প সময়ের মধ্যে কোটি কোটি টাকার মালিক হন। সোনারগাঁ ও নারায়ণগঞ্জে তার নামে ও বেনামে রয়েছে একাধিক বাড়ি ও সম্পত্তি, যার সত্যতা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও ভূমি অফিসে খোঁজ নিলে পাওয়া যাবে।
সম্প্রতি কাঁচপুরে তার মায়ের নামে থাকা সম্পত্তি হেবা দলিলের মাধ্যমে নিজের নামে করে নিয়েছেন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিপির বিশেষ বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার প্রকল্পের কাজ তিনি নিজেই বাস্তবায়ন করছেন এবং কাজ সমাপ্ত না করে নানা অজুহাতে বিল আটকে রাখছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও সরকারি বাসা থেকে গ্যাস বিল বাবদ গত ১০ বছরে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও রয়েছে।
এ বিষয়ে আশরাফুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, “বদলির বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত। গত এক মাস আগে সারা দেশে সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটরদের বদলির নির্দেশনা আসে, আমি সেই আদেশের আলোকে বদলি হয়েছি। দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।”
সচেতন মহলের প্রশ্ন—একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সন্তান হয়ে এত স্বল্প সময়ে আশরাফুল ইসলাম কীভাবে এত বিত্তবৈভবের মালিক হলেন? তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত দাবি করেছে স্থানীয়রা।
নতুন কাগজ/বিএইচ
