শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

পঞ্চগড়ে ভিডব্লিউবি চাল বিতরণে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে আটক ১১

পঞ্চগড়ে ভিডব্লিউবি চাল বিতরণে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে আটক ১১
বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা থেকে সোমবার রাতে আট পুরুষ ও তিন নারী এক ইউপি সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

পঞ্চগড়ে ভালনারেবল উইম্যান বেনিফিটের (ভিডব্লিউবি)  চাল বিতরণে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে আটক করেছে পুলিশ। 

বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা থেকে সোমবার রাতে আট পুরুষ ও তিন নারী এক ইউপি সদস্যকে আটক করা হয়।

 এ সময় তাদের আদায় করা ১ লাখ ১৩ হাজার ৯শ টাকা জব্দ করা হয়। পরে তাদের বোদা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। 

আটক ব্যক্তিরা হলেন, বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খলিলুর রহমান, দুই নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হামিজ উদ্দিন, তিন নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রিয় নাথ রায়, পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সুনীল চন্দ্র রায়, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য দাহির উদ্দিন, সাত নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য খাদিমুল ইসলাম, আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মামুন ইসলাম, নয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আশরাফুল ইসলাম, ১,২,৩ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য শেফালী রাণী, ৪,৫,৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য বিলকিস বেগম এবং ৭,৮,৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রুপালী বেগম।

এক পুলিশের ভাষ্য,বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়নে সোমবার সকাল থেকে দরিদ্র পিঁড়িত অসহায় নারীদের সাহায্যার্থে সরকারভাবে ভিডাব্লিউবি কার্ডের আওতায় ২৫৮ টি পরিবারের মাঝে ৩০ কেজি করে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত মোট ৫ মাসের মোট ১৫০ কেজি চাল বিতরণ করা হচ্ছিল। এ সময় উপকারভোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে ৫০০-৬০০ করে টাকা আদায় করছিলেন ওই ইউপি সদস্যরা।  পরে সুবিধাভোগীরা টাকা আদায়ের অভিযোগে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ১১ ইউপি সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এক পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে পাঁচ শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন  করতে থাকেন।

পরে খবর পেয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির, সহকারি কমিশনার (ভূমি) এসএম ফুয়াদ, সেনাবাহিনীর সদস্যরা সহ বোদা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুঁটে যান। স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা পেয়ে অভিযুক্তদের আটক করে সেনাবাহিনী। এরপর অভিযুক্তদের থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

ভিডব্লিউবি উপকারভোগী দুলাল রহমান বলেন, আমাদের কাছে টানা ৫ মাসের চাল দেয়ার নামে ৫০০ টাকা করে নেয়। টাকা না দিলে চাল পাবো না বলেছে। তাই আমরা টাকা দিছি।

হাসিবুল ইসলাম বলেন, ইউপি সদস্যরা এ চাল বিতরণের জন্য স্থানীয় সুবিধাভোগীদের যেখানেই পাচ্ছে সেখানেই বলে টাকা নিচ্ছে। আসলে চরম একটা অন্যায় কাজ করেছে। যেখানে সরকার এ চালে টাকা নিচ্ছে না, উল্টো তারা নিচ্ছে। এ ঘটনায় তাদের কঠিন বিচার হওয়া দরকার।

শাহিনুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি হচ্ছে। এর মাঝে আজ এটা হয়েছে এবং প্রকাশ পেয়েছে বলে তারা আটক হয়েছে। অনিয়মের কারণে আমরা তাদের বিচার দাবি করছি। একই সাথে বলতে চাই, যেহেতু ১১ জন সদস্য আটক হয়েছে। তাই তাদের বিচার কার্যক্রম চলা অবস্থায় আমাদের পরিষদের ও ইউনিয়নের সেবা যেন প্রশাসন প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

এদিকে, সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেন অভিযুক্ত ইউপি সদস্যরা। 

ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আট নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মামুন ইসলাম বলেন, আমরা যেহেতু চালগুলো বোদা থেকে নিয়ে এসেছি। এ কারণে আমাদের পরিবহন খরচ হয়েছিল। আমরা উপকার ভোগীদের কাছে ৫০০ টাকা করে চেয়েছিলাম। তারা দিয়েছিল। তবে আমাদের এটি নিয়ে ঠিক হয়নি। আমরা সকলের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম। যে এরকম ভুল আর কোনোদিন করা হবে না। এরপরও আমাদেরকে আটক করা হয়েছে।
 
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার নজির বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি ও ঘটনাস্থলে পাওয়া আলামতের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। 

বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিম উদ্দিন বলেন, চাল বিতরণের সময় ইউপি সদস্যরা উপকারভোগীদের কাছে ৫০০-৬০০ টাকা নিয়েছেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সেখানে গেলে প্রমাণ মেলে। আটক ১১ ইউপি সদস্য থানা হেফাজতে আছেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। 


আমির খসরু লাবলু , পঞ্চগড় প্রতিনিধি
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন