শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj
চট্রগ্রামের ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী ঢাকাইয়া আকবর হত্যা

রহস্যময়ী সেই তরুণী উধাও! সাজ্জাদের ভাই-ভাগ্নে আটক

রহস্যময়ী সেই তরুণী উধাও! সাজ্জাদের ভাই-ভাগ্নে আটক
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গায় শীর্ষ সন্ত্রাসী আলী আকবর প্রকাশ ঢাকাইয়া আকবর হত্যা মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-৭ ও নগর পুলিশের একটি দল। পুলিশের একটি সূত্র গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও র‍্যাবের পক্ষ হতে কেবল একজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। যদিও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে আকবরকে ‘হানিট্র‍্যাপে’ ফেলা রহস্যময় সেই নারী।

সোমবার (২৬ মে) দিবাগত রাত ১২টার দিকে নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন দি কিং অব চিটাগং ক্লাব এবং চান্দগাঁও থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন—ওসমান আলী সেগুন (৩৪) এবং তার ভাগিনা মো. আলভিন (৩০)। এদের মধ্যে সেগুন বিদেশে পলাতক সাজ্জাদ আলী খান প্রকাশ বড় সাজ্জাদের বড় ভাই।

জানা গেছে, সোমবার রাতে সন্ত্রাসী ঢাকাইয়া আকবর হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে পৃথক অভিযান চালায় র‍্যাব। সেসময় সেগুন ও আলভিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

যদিও আরেকটি সূত্রের দাবি, এজাহারনামীয় আরেক আসামি ইমনকেও তার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সেই তথ্যের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

নগর পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সিভয়েস২৪’কে জানিয়েছেন, আকবর হত্যার ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা র‍্যাবের হেফাজতে আছেন। প্রক্রিয়া শেষে তাদের পতেঙ্গা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

তবে সকালে র‍্যাব-৭ এর পক্ষ হতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল রাতে নগরের চান্দগাঁও থানার ফরিদারপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আলভিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরেক আসামি সেগুনকে গ্রেপ্তারের বিষয় র‍্যাবের পক্ষ হতে এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।

এর আগে, শুক্রবার (২৩ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকার পশ্চিম পয়েন্টের ২৮ নম্বর দোকানের সামনে আড্ডারত অবস্থায় সন্ত্রাসী ঢাকাইয়া আকবরকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা।

একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন দর্শনার্থী জান্নাতুল বাকী (৩০) এবং শিশু মহিম ইসলাম রাতুল (৮)। সে নগরের দক্ষিণ পতেঙ্গার ফুলছড়িপাড়ার শওকত হোসেনের ছেলে।

ঘটনার দুইদিন পর গত ২৫ মে সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকাইয়া আকবরের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার স্ত্রী রুপালী বেগম বাদী হয়ে একই দিন ১১ জনের নাম উল্লেখ করে পতেঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

জানা গেছে, খুনের পাঁচদিন আগে ফেসবুকে নুসরাত নামে এক তরুণীর সঙ্গে পরিচয় হয় ঢাকাইয়া আকবরের। শুক্রবার (২৩ মে) তারা প্রথমবার দেখা করতে অক্সিজেন মোড় থেকে প্রাইভেটকারে পতেঙ্গা সৈকতে আসেন। আকবরের সঙ্গে ওই তরুণী ছাড়াও এসময় তার এক ছোট ভাই এবং কয়েকজন বন্ধু ছিল।

তারা সবাই মিলে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের ২৮ নম্বর খাবারের দোকানে বসে। আকবর খাবার নিয়ে বন্ধুদের থেকে একটু দূরে আরেক টেবিলে গিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে বসে। মিনিট দশেক পরেই চারজন যুবক এসে আকবরকে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে আকবর সমুদ্রের দিকে দৌঁড়ে পালালেও কমপক্ষে ৬ থেকে ৭টি গুলি তার শরীর ভেদ করে। এরইমধ্যে আকবরের সঙ্গে থাকা সব বন্ধুরা পালিয়ে গেলেও রহস্যময় ওই তরুণী হামলাকারীদের মোটরসাইকেলে চড়ে সমুদ্র সৈকত ছাড়েন।

খুনের শিকার আলী আকবরের বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। বিভিন্ন সময় এসব মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হলেও জামিনে ছাড়া পেয়েছেন।

সন্ত্রাসী আকবরের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালে গ্রেপ্তারের পর জেলে থাকা অবস্থায় আকবর ভেবেছিলেন ‘গুরু’ সাজ্জাদ আলী খান তার জামিনের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু ‘গুরুর’ সেই ‘আশীর্বাদের হাত’ পাননি ‘সন্ত্রাসী’ আকবর। তার পরিবারই অনেক কষ্টে জোগাড় করেছে মামলা পরিচালনার ব্যয়। তখন থেকেই ‘গুরু’ সাজ্জাদের ওপর ক্ষোভ জন্মে তার। জামিনে বেরিয়ে আকবর গুরুকে টেক্কা দিতে নিজেই গড়ে তোলেন বাহিনী। এরপর থেকেই বড় সাজ্জাদের চাঁদাবাজিসহ নানা কর্মকাণ্ডে বাধা হয়ে দাঁড়াতেন আকবর। পুলিশকে সাজ্জাদের বিভিন্ন তথ্য দিয়েও সাহায্য করতেন তিনি। তাই আকবরের প্রতি সম্প্রতি বেশ ক্ষুব্ধ হন বড় সাজ্জাদ। 

সাজ্জাদ আলী খানের গ্রুপ থেকে ‘সন্ত্রাসী’ ঢাকাইয়া আকবর বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরই সামনে আসে বর্তমানে আলোচিত সাজ্জাদ হোসেন প্রকাশ ‘ছোট সাজ্জাদ’। যিনি বর্তমানে কারাবন্দী আছেন। তিনি হয়ে ওঠেন বিদেশে পলাতক ক্যাডার সাজ্জাদ আলী খানের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। চট্টগ্রাম নগরে একের পর এক খুন, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজির নেপথ্যের ‘ভিলেন’ হিসেবে নাম উঠে আসে ছোট সাজ্জাদের।

সন্ত্রাসী ‘অন্দরমহলের’ সাবেক ‘গুরু’ সাজ্জাদ আলী খানের শিষ্য হওয়ায় ছোট সাজ্জাদের সামনেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়ান ঢাকাইয়া আকবর।

ঢাকাইয়া আকবরের ফেসবুক আইডি ঘেঁটে দেখা গেছে, কারাবন্দি ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রী তামান্না শারমিনকে নিয়ে প্রায়ই ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও পোস্ট করতেন তিনি। এছাড়া পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খান এবং বিএনপির এক শীর্ষ নেতাকে হুমকি দিয়েও ভিডিও পোস্ট করতে দেখা গেছে তাকে।

সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া শীর্ষ এই সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দিতে পুলিশকে তথ্য দিয়েছেন আকবর—গুঞ্জন আছে এমনও। হাসপাতালে আকবরের স্বজনদেরও দাবি, এই ঘটনায় কারাগারে বন্দী ‘সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জাদের অনুসারীরা জড়িত। আর নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছে সাজ্জাদ আলী খান প্রকাশ বড় সাজ্জাদ। যিনি বর্তমানে ভারতের পাঞ্জাবে পলাতক আছেন।

র্বাতা প্রেরক- রুপন দত্ত,চট্রগ্রাম


রুপন দত্ত, জেলা প্রতিনিধি চট্রগ্রাম 
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন