পদত্যাগে অনীহা ফারুকের, আইসিসির নিষেধাজ্ঞা ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন বিসিবি


বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ফারুক খান সম্প্রতি পদত্যাগের প্রশ্নে সরাসরি অস্বীকৃতি জানান। তিনি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছেন, নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তিনি পদত্যাগ করবেন না। এর পেছনে রয়েছে বিসিবি ও দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা জটিলতা।
ফারুক বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে সরকার আর আমাকে বিসিবি সভাপতির পদে রাখতে চাইছে না। কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানানো হয়নি। বিনা কারণেই আমি পদত্যাগ করতে রাজি নই।’ তার এই অবস্থান শোনা মাত্রই বিসিবি ও ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আইসিসির (আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল) কাছ থেকে শাস্তিমূলক কোনো পদক্ষেপ এড়ানোর জন্য বিসিবির অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি। ফারুকের পদত্যাগ হলে বোর্ডের শীর্ষ নেতৃত্বে হঠাৎ পরিবর্তন ঘটতে পারে, যা আইসিসির দৃষ্টিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিসিবির এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘আইসিসি আমাদের পরিচালন কাঠামোকে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। ফারুকের হঠাৎ পদত্যাগের খবর পেলে তারা বোর্ডের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। সেই কারণে বোর্ড পরিস্থিতি ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে।’
এদিকে, দেশের ক্রিকেট প্রেমীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে এই সংকট নিয়ে। ফারুকের রয়ে যাওয়া, আর্থিক স্বচ্ছতা এবং প্রশাসনিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্তরে কিছু চাপের মুখে ফারুকের পদদূর্গম নিয়ে নানা কল্পনা চলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘বিসিবির নেতৃত্ব বদল হলে তা দেশের ক্রিকেটের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে। তাই ফারুকের পদে থাকা বিসিবির জন্য নিরাপত্তা বলয় হিসেবে কাজ করবে।’
ফারুক নিজেও জানিয়েছেন, ‘আমি দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করতে চাই। অস্পষ্ট কোনো অবস্থায় পদত্যাগ করাটা আমার জন্য সঠিক হবে না।’
সেই সাথে বিসিবি ও সরকারের মধ্যে আলোচনাও চলছে যাতে এই সংকট নিরসন করা যায় এবং দেশের ক্রিকেটের স্বার্থ সর্বোচ্চ রাখা যায়।
গত ৯ মাস ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ফারুক আহমেদ। এই সময়ে তার বিরুদ্ধে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে সম্প্রতি নিয়ম ভেঙে বড় অঙ্কের অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিসিবিতে একাধিক বার অভিযান চালিয়েছে।
এই অভিযোগ ও অনিয়মের প্রেক্ষিতে গত দুই সপ্তাহ ধরে তাকে পদ থেকে সরানোর গুঞ্জন ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। ২৮ মে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা তাকে অফিসে ডেকে বলেন, সরকার তাকে আর বিসিবির সভাপতি পদে দেখতে চায় না এবং দ্রুত পদ পরিবর্তন করতে চায়।
তবে ফারুক এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে কোনো সাড়া দেননি এবং তিনি মন্ত্রণালয়ের কাছে ২-৩ দিনের সময় চেয়েছেন পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য। ফারুক নিজেই বলেন, “উপদেষ্টা আমাকে সরাসরি পদত্যাগ করতে বলেননি, শুধু জানিয়েছেন সরকার আমাকে আর ‘কন্টিনিউ’ করাতে চায় না। এখনই সিদ্ধান্ত নেই, দেখতে চাই কী হয়।”
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সাবেক জাতীয় দলের অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে বিসিবির সভাপতি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তবে ফারুক যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করেন, তাহলে এ পদ পরিবর্তন করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সভাপতির পদে আসার জন্য কাউন্সিলরের পদ থাকা আবশ্যক। বুলবুল সাবেক অধিনায়ক হওয়ায় তিনি এই যোগ্যতা পূরণ করেন, তবে নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়কে একাধিক ধাপ পেরোতে হবে।
দেশের এক শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ফারুক স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। তিনি বলেন, “আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিইনি। সরকার আমাকে আর বিসিবি সভাপতির পদে রাখতে চাইছে না শুনেছি, কিন্তু কেন, সেটা জানানো হয়নি। বিনা কারণেই পদত্যাগ করব না।”
এ বিষয়ে সাবেক-বর্তমান অনেক ক্রিকেটার ও সংগঠকও ফারুকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মাত্র ৯ মাসের মধ্যে দুইবার বোর্ড সভাপতির পরিবর্তনকে অনেকে অকারণে বিশৃঙ্খলার সংকেত হিসেবে দেখছেন, যা বোর্ডের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফারুককে জোরপূর্বক সরালে আইসিসি থেকে বিসিবির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আসার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ আইসিসি স্বাধীনভাবে পরিচালিত ক্রিকেট বোর্ডকে মূল্যায়ন করে এবং সরকারের হস্তক্ষেপকে বরদাস্ত করে না। এর আগেও শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের মতো দেশের ক্রিকেট বোর্ডে সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আইসিসি।
অন্যদিকে, আমিনুল ইসলাম বুলবুল জানিয়েছেন, “প্রায় ১০-১৫ দিন আগে ক্রীড়া উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আমাকে কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আনার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিল। আমি সেই প্রস্তাবে সম্মত হয়েছি।”
বুলবুল আরও বলেন, “আমার বিসিবিতে দীর্ঘ সময় থাকার ইচ্ছে নেই। তবে দেশের প্রয়োজন হলে, আবেগিক দিক থেকে না দেখে দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তুতি আমার রয়েছে। দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা আমার কাছে সবচেয়ে বড় বিষয়।”
এই অবস্থায় বিসিবি ও মন্ত্রণালয়কে ভাবতে হবে কিভাবে দেশের ক্রিকেটকে অশান্তির হাত থেকে রক্ষা করা যায় এবং স্থিতিশীল নেতৃত্ব নিশ্চিত করা যায়।
