কোরবানির প্রস্তুতিতে চট্টগ্রামে কর্মকারদের দম ফেলার ফুরসত নেই


পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন চট্টগ্রামের কর্মকাররা। কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় দা, ছুরি, চাপাতি, বঁটি তৈরিসহ পুরনো সরঞ্জাম শাণ দেওয়ার কাজে দিনরাত এক করে খাটছেন এই পেশাজীবীরা।
চট্টগ্রাম মহানগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, কাজীর দেউড়ি, আগ্রাবাদ, চকবাজার, বায়েজিদ, হালিশহর, কর্ণফুলী এলাকা এবং জেলার হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, সীতাকুণ্ড, বোয়ালখালী, পটিয়া ও আনোয়ারা উপজেলার স্থানীয় বাজারগুলোতে কামারশালাগুলোতে কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। এসব দোকানে দা, ছুরি, চাপাতি, বঁটি তৈরি ও পুরনো সরঞ্জাম ধার দেওয়ার কাজ চলেছে পুরোদমে।
এখানকার কারিগরদের তৈরি দেশি লোহার দা-ছুরি ও অন্যান্য সরঞ্জাম মানসম্মত হওয়ায় স্থানীয় বাজারে যেমন চাহিদা রয়েছে, তেমনি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও পাইকাররা অর্ডার নিয়ে আসছেন। অনেকেই অগ্রিম অর্ডার করে নিয়ে যাচ্ছেন পছন্দের সরঞ্জাম।
ফটিকছড়ির কর্মকার বাসু বলেন, ‘কোরবানির আগে আমাদের সারা বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় যায়। সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করতে হয়। অর্ডার বেশি, সময় কম। ডেলিভারির চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
একই এলাকার আরেক কর্মকার সুমন জানান, ‘আমরা বংশ পরম্পরায় শত বছর ধরে এই পেশায় আছি। ঈদকে সামনে রেখে দা, চাপাতি, বঁটি, ছুরি বানানোর পাশাপাশি পুরনো জিনিস ধার দেওয়া ও মেরামতের কাজও করছি। তবে ভালো মানের কাঁচামাল ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে অনেক সময় গ্রাহকের চাহিদামতো কাজ করা যাচ্ছে না। আর্থিক সমস্যাও রয়েছে।’
কারিগরদের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা না থাকায় কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিভ্রাট, যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি কাজের গতিকে ব্যাহত করছে।
তবে আশার কথা হলো, এই মৌসুমে কর্মকারদের আয়ও বাড়ছে। প্রতিটি দা, ছুরি, চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। মান ও আকার অনুযায়ী দামের পার্থক্য থাকলেও চাহিদা ব্যাপক। একেকজন কারিগর দিনে তৈরি করছেন ১০-১৫টি সরঞ্জাম।
ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, কর্মব্যস্ততাও ততই বাড়ছে। কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় ধারালো সরঞ্জামের অন্যতম যোগানদাতা এই শ্রমজীবী কর্মকারদের নিরলস পরিশ্রমেই প্রাণ পাচ্ছে কোরবানির প্রস্তুতি।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ফটিকছড়ি, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কর্মকাররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড়ও বেড়েছে। পুরনো দা-ছুরি ধার দেওয়া, নতুন সরঞ্জাম কেনা আর অর্ডার নেওয়ার কাজ চলছে পুরোদমে।
