"শ্রম আর আগুনে গড়ে উঠছে কুরবানির সরঞ্জাম, কর্মমুখর কামারপাড়া"


আর মাত্র চারদিন বাকি পবিত্র ঈদুল আযহার। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে এদিন পশু কোরবানি করবেন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এসব পশুর মাংস কাটতে দা, বটি, ছুরি, চাপাতি ইত্যাদি ধাতব হাতিয়ার অপরিহার্য। আর এসব হাতিয়ার তৈরিতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন নীলফামারী কামার শিল্পীরা। নীলফামারীতে ২ হাজার পরিবার কামার শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা। দম ফেলার যেন ফুরসত নেই তাদের।পশু জবাইয়ের জন্য ছুরি-চাকু-বটি, চাপাতিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি কিনতে শুরু করেছেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ একটু আগেভাগে দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম শান দিয়ে নিচ্ছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ও কৃষি যন্ত্রপাতি আধুনিক হওয়ায় আমাদের পণ্যের চাহিদা কমেছে। এবার কোরবানির ঈদকে ঘিরে লোহা ও কয়লার দাম বেড়েছে। খরচ বাড়লেও আমাদের আয় বাড়েনি বলে জানান তাঁরা।এভাবেই ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠেছে কামারপাড়া। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পেছনে পড়ে গেলেও কোরবানির ঈদ এখনো এই প্রাচীন পেশায় খানিকটা প্রাণ ফেরায়।
সরেজমিন নীলফামারী জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হাতুড়ি আর লোহার টুংটাং শব্দে মুখরিত কামার পাড়া। কেউ হাঁপর টানছেন, সেই হাঁপরে পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। কেউ কেউ হাতুড়ি পিটিয়ে তৈরি করছেন দা, বটি, ছুরিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম। ঈদের দিন পর্যন্ত চলবে তাদের এমন ব্যস্ততা।তাই খাওয়া-দাওয়া ভুলে কাজ করছেন তারা। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কাজ। সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কয়েকগুণ ব্যস্ততা বেড়ে যায় কামারদের। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে তাদের জিনিসপত্রের কেনা-বেচা বেড়ে যায়। এ থেকে অর্জিত টাকায় সারা বছর চলে সংসার। বছরের বেশিরভাগ সময় কামার শিল্পীদের কাজ কম থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই তারা এ সময়টাকে কাজে লাগান।
ক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, ‘কোরবানির আর বেশি দিন নেই। তাই আগে থেকেই দা, চাপাতিসহ দরকারি জিনিস কিনে নিচ্ছি। ঈদের সময় প্রচণ্ড ভিড় হয়, সময় বাঁচাতেই আগেভাগে এসেছি।আরেক বিক্রেতা আইনুল ইসলাম বলেন, ‘একটা দা-বটি বানাতে অনেক খরচ হয়, কিন্তু সেই তুলনায় দাম ঠিকমতো পাওয়া যায় না। তাছাড়া এখন বিদেশি দা-বটিও বাজারে ঢুকেছে, যার প্রভাব পড়েছে আমাদের বিক্রিতে। তারপরও ঈদের জন্য কিছুটা বিক্রি বেড়েছে।
চাপাতি কিনতে আসে ক্রেতা মফিজুল ইসলাম বলেন, গত ঈদেও চাপাতি কিনেছিলাম। কিন্তু একদিন ব্যবহারের পর সেগুলো কোথায় আছে খুঁজেও পাই না। ঘরে একটি পেয়েছি তাও মাটিতে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এ বছর আবারও চাপাতি কিনতে এসেছি। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এ বছর দামও অনেক বেশি।
