পতিত ফ্যাসিবাদ নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথে বাধা


পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বারবার বাধা দিচ্ছে পতিত ফ্যাসিবাদ ও তাদের দেশি-বিদেশি মিত্ররা।
শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় দেওয়া এই ভাষণে তিনি বলেন, তারা নানা রকম অপপ্রচারে লিপ্ত। তাদের মূল লক্ষ্য জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ব্যর্থ করে আবারো দেশকে করায়ত্ত করা। আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি—আমরা একটি যুদ্ধাবস্থায় রয়েছি।
তিনি দেশবাসীকে একত্রিত থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা যদি একসঙ্গে থাকি, কোনো পরাজিত শক্তি আমাদের পথ আটকাতে পারবে না। মাতৃভূমির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও মর্যাদার বিরুদ্ধে কোনো আঘাত একযোগে প্রতিহত করব।”
প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে উল্লেখ করেন, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনে ব্যাপকভাবে গুমের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। অনেকে অমানবিক পরিবেশে বন্দি ছিলেন। কিছু বন্দিশালার আয়তন ছিল মাত্র তিন বাই তিন ফিট। তিনি জানান, গুম-সংক্রান্ত একটি স্বাধীন কমিশন ইতোমধ্যে দুটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এবং আরও অভিযোগ অনুসন্ধানে কাজ করছে।
কমিশনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভয়াবহ নির্যাতনের ঘটনা—মানুষকে নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া, ইটভাটায় ফেলে দেওয়া কিংবা ট্রেনের নিচে ছুঁড়ে ফেলার মতো নির্মমতা উল্লেখ করেন তিনি।
তদন্তের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ঢাকা, বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সম্ভাব্য গুম কেন্দ্র পরিদর্শন ও সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। এসব অভিযোগের কিছু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি, গুম নিরোধে একটি আইন প্রণয়নের কাজও প্রায় সম্পন্ন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত ১৬ বছর ধরে আমাদের রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে অপরাধ, অনিয়ম, ও দুর্নীতির ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকর অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি জানান, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকার নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেছে। সপ্তাহজুড়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জাতীয় ঐক্য গঠনের বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। অংশগ্রহণকারী নেতৃবৃন্দ বর্তমান সংকট মোকাবেলায় সম্মিলিত উদ্যোগ ও সমঝোতার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
ভাষণের শেষে তিনি বলেন, এই দেশ আমাদের সকলের। সংকটের সময় বিভাজন নয়' ঐক্যই হোক আমাদের প্রধান শক্তি।
