শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

পালিত হলো সৈয়দপুর ট্রেন ট্রাজেডি ও গণহত্যা দিবস

পালিত হলো সৈয়দপুর ট্রেন ট্রাজেডি ও গণহত্যা দিবস
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

যেখানে ট্রেন থেমেছিল, সেখানেই নিঃশেষ হয়েছিল ৪৪৮ প্রাণ

নিঃশব্দে কেঁদেছে সৈয়দপুর। হৃদয়ের গভীর চেতনায় আর বেদনার অতল গহ্বরে ডুবে ১৩ জুন, শুক্রবার, পালিত হলো সৈয়দপুর ট্রেন ট্রাজেডি ও গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনটিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের দেশীয় দোসররা রচনা করেছিল ইতিহাসের এক নির্মমতম অধ্যায়—গোলাহাট বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়েছিল ৪৪৮ জন নিরপরাধ হিন্দু ও মাড়োয়ারী নারী-পুরুষ-শিশুদের। সেই নিষ্ঠুর গণহত্যার স্মৃতিকে ধারণ করেই আজও শিহরিত হয় সৈয়দপুরবাসী।

এই দিনটিকে কেন্দ্র করে সৈয়দপুর হিন্দু কল্যাণ সমিতি ও সৈয়দপুর স্মরণিকা পরিষদের উদ্যোগে পালিত হয় দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি। সকালেই পূজা-অর্চনা ও গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা। শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রার্থনার আয়োজন যেন মুহূর্তটিকে করে তোলে অবিরত এক শোকের নদী।

গোলাহাট বধ্যভূমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন শহীদ পরিবারের সন্তান রতন কুমার আগরওয়ালা। সেখানে বক্তব্য রাখেন সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব মো. আব্দুর গফুর সরকার, সহ-সভাপতি কাজী একরামুল হক, সাধারণ সম্পাদক শাহীন আকতার শাহীন, সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ পারভেজ লিটন, বিএনপি নেতা ও সৈয়দপুর প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক অধ্যাপক শওকত হায়াত শাহ, মহিলা দলের সভাপতি রওনক আফজাল রিনু ও সাধারণ সম্পাদক রূপা হোসাইন।

আলোচনায় শহীদ পরিবারের সন্তান এবং স্মরণিকা পরিষদের সভাপতি সুমিত কুমার আগারওয়ালা নিক্কি তাঁর কণ্ঠে তুলে ধরেন সেই বিভীষিকাময় দিনের স্মৃতি। তাঁর কণ্ঠে কাঁপন ছিল, চোখে ছিল জল—তাঁর সেই স্মরণ যেন গোটা শহরকে আরও একবার ফিরিয়ে নিয়ে যায় ৭১-এর সেই রক্তঝরা সকালে।

দিবস উপলক্ষে শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কের শহীদ স্মৃতি অম্লান চত্বরে দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। রাতের বেলায় হীরালাল ঠাকুরবাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় গীতা পাঠ, ভজন-কীর্তন এবং প্রসাদ বিতরণ। শান্তিপূর্ণ ও আবেগঘন পরিবেশে চলা এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বিএনপি, এর অঙ্গসংগঠনসমূহ এবং স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা।

১৯৭১ সালের ১৩ জুন—দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ যখন তুঙ্গে, তখন সৈয়দপুর শহরের হিন্দু ও মাড়োয়ারী পরিবারগুলোর সদস্যদের নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেওয়ার মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে একটি বিশেষ ট্রেনে তোলা হয়। কিন্তু মানবতার সেই আশ্রয়স্থল ট্রেনই হয়ে ওঠে মৃত্যুকূপ। গোলাহাট এলাকার রেলওয়ে কারখানার শেষ প্রান্তে নিয়ে গিয়ে ট্রেন থামিয়ে একে একে নামিয়ে হত্যা করা হয় ৪৪৮ জন নিরস্ত্র নাগরিককে। শিশু, নারী, বৃদ্ধ কেউই রক্ষা পাননি। শহীদদের সেই রক্তে রঞ্জিত ভূমিই আজকের গোলাহাট বধ্যভূমি।

এই হৃদয়বিদারক ট্রাজেডির স্মরণে ২০১৪ সালে নির্মিত হয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ, যা আজও ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য দলিল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।


দৈএনকে/জে,আ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আরও পড়ুন