পারকি সৈকতে নিঃসঙ্গ জাহাজ পর্যটকদের মূল আকর্ষণ


বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপকূলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চারটি জাহাজ তীরে এসে আটকে গিয়েছিল।গত ২৯ মে দিবাগত রাতের ঝোড়ো হাওয়ায় এসব ঘটনা ঘটে। তবে এখন জাহাজগুলো দেখতে ভিড় করছে পর্যটকরা।
আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা সমুদ্র সৈকতের উঠান মাঝির ঘাট এলাকায় আটকে যায় কয়লাবাহী দুটি কার্গো ও লাইটার জাহাজ—নাভিমার-৩ ও মারমেইড-৩।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ মে রাত ১২টার পর মহেশখালী থেকে আসার পথে প্রবল বাতাস ও সমুদ্রের ঢেউয়ের কারণে জাহাজ দুটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তীরে উঠে যায়। ‘জাহাজটি ৫০-৬০ ফুট বালির নিচে ঢুকে গেছে।
জাহাজ দুটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই মালিকানাধীন এক কোম্পানির বলে জানান তিনি।এদিকে ঘটনার পরপরই কোস্ট গার্ড সাঙ্গু স্টেশন ও বারআউলিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা জাহাজটি পাহারার ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
এসব জাহাজ দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় করে, ফলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেখানে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী । এখন এসব দৃশ্য দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন পর্যটকরাও। দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা বিকালে ঘুরতে আসছেন উঠান মাঝির ঘাটে। এর আগে ২০১৭ সালে ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে পারকিতে আটকে গিয়েছিল ‘ক্রিস্টাল গোল্ড’ নামের একটি জাহাজ। যা পাঁচ বছর ধরে সৈকতে পড়ে ছিল। এ কারণে বন বিভাগের প্রায় ৮০ হেক্টর জমির ঝাউবন বিলীন হয়ে যায়। ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কাও করছেন স্থানীয়রা।
বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানের তালিকায় কক্সবাজার বা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত শীর্ষে অবস্থান করছে। তবে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য কোনো অংশেই কম নয়। ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই সৈকতের সবুজ ঝাউবন, লাল কাঁকড়া ও নীলাভ জলরাশি যেন সর্বদা ভ্রমণকারীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত সবসময়।
পারকি সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ স্থানভেদে ৩০০-৩৫০ ফুট। স্থানীয়দের কাছে উপকূলীয় পার্কি সমুদ্র সৈকত ‘পারকির চর’ নামে পরিচিত।
কর্ণফুলী নদীর মোহনার পশ্চিম তীরে পারকি সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রামের একটি অন্যতম পর্যটন এলাকা। নগরী থেকে সড়কপথে এই স্থানটির দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। যেতে লাগে ঘণ্টাখানেক। তার পাশেই আছে সিইউএফএল ও কাফকো সার কারখানা ও পাহাড় সংলগ্ন কোরিয়ান ইপিজেড। ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পারকি সমুদ্র সৈকতে আছে মনোমুগ্ধকর ঝাউবন। দীর্ঘ এক যুগ ধরে পারকি সমুদ্র সৈকতের নাম জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
প্রতিবছর শীত আসলে ওই বিচে পর্যটকের আনাগোনা মুখরিত হয়ে ওঠে। সাগরের গর্জন আর ঢেউয়ের মিতালী সঙ্গে সাগরের নীল পানি ও তীরের ঝাউবনের সৌন্দর্য একসঙ্গে উপভোগ করতে পারবেন সেখানে।
একইসঙ্গে সৈকতের বালুচরে লাল কাঁকড়ার ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য কিংবা দূরে গভীর সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানো ও নোঙর করা ছোট-বড় জাহাজের সারি দেখতে পাবেন।
সমুদ্র সৈকতের সাথেই ঝাউবনের ছায়াতলে গড়ে উঠেছে খাবারের দোকানসহ অনেক দোকানপাট। এর সঙ্গে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।এছাড়াও আছে সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানোর জন্য স্পিডবোট, সমুদ্র তীরেই ঘুরে বেড়ানোর জন্য সি-বাইক আর ঘোড়া। এজন্য অবশ্য আপনাকে নির্দিষ্ট ভাড়া গুনতে হবে প্রতি ঘণ্টায়।পারকি সৈকতের একটি বড় আকর্ষণ হলো একটি নিঃসঙ্গ জাহাজ। সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের মাঝে দানবাকারের জাহাজকে ঘিরে আগ্রহের কমতি নেই। একা ও নিঃসঙ্গ জাহাজটি কর্ণফুলী নদী আর চট্টগ্রাম বন্দরের যতই ক্ষতির কারণ হোক না কেন, দিন দিন বাঁধা পরতে থাকে মানুষের ভালবাসায়। একা নিঃসঙ্গ জাহাজটিই এখন দর্শনার্থীদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্র।
পতেঙ্গা ১৫ নাম্বার জেটি থেকে সহজের কর্ণফুলী পার হয়ে রিকশা বা সিএনজি নিয়ে সহজেই চলে যেতে পারেন পারকি বিচে। এছাড়াও আরেকটি উপায় আছে তা হলো, শাহ আমানত সেতু হতে বটতলী গামি বাসে চড়ে বসা।বাস ভাড়া পড়বে ২৫-৩০ টাকা। বাস থেকে নেমে পরবেন সেন্টার নামক স্থানে। সেখান থেকে রিকশা বা সিএনজিতে জন প্রতি ২৫ টাকা ভাড়ায় পৌছে যাবেন পারকি বিচে।
