বনানীতে চিহ্নিত সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুমের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা


রাজধানীর বনানীতে চিহ্নিত সন্ত্রাসী আব্দুর রহমান মাসুম ওরফে মোল্লা মাসুমের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। চাঁদা না দিলে ধরে নিয়ে গিয়ে করে নির্যাতন। আবার পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয় মিথ্যা মামলায়। সম্প্রতি এমন ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। মহাখালী ওয়্যারলেস গেইট এলাকায় কলম্বিয়া সুপার মার্কেটের এক কসমেটিকস ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে না দেওয়ায় ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে শেষ পর্যন্ত টাকা আদায় করতে না পেরে পরে সেই ব্যবসায়ীকে পুলিশে ধরিয়ে দেয় মোল্লা মাসুম তাঁর অনুসারী সোর্সদের সহযোগিতায়। ফাঁসানো হয় মিথ্যা মামলায়।
ওই ব্যবসায়ীর নাম স্বপন রয়। প্রতক্ষ্যদর্শী সূত্রে জানা যায় ঘটনার দিন মোল্লা মাসুম তাঁর দলবল নিয়ে এসে মার্কেটের সামনে মব সৃষ্টি করে স্বপনকে ব্যাপক মারধর করে ধরে নিয়ে যায়। টিএন্ডটি মাঠে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় মারধর করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হয়। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে ফাঁসিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় অনেকেই জানান স্বপন রয় অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির একটা ছেলে।
মোল্লা মাসুম মূলত পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজ। তবে ভাড়ায় যেকোনো অপরাধ সংঘটিত করেন। দীর্ঘদিন ছিল আত্মগোপনে। গত বছরের ৫ই আগষ্টের পর ফিরে এসেছে। বর্তমানে বনানী থানার আওতাধীন গোডাউন বস্তি, বেদে বস্তি, এরশাদ নগর বস্তি ও বেলতলা বস্তিকে ঘিরে তাঁর অপরাধ সাম্রাজ্য। এই বস্তিতে চলছে তাঁর অবাধ মাদক ব্যবসা, বিচার সালিশের নামে ফিটিং বানিজ্য, চাঁদাবাজি, লুটপাট ও দখল। নিজের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এসব এলাকায় ঘটাচ্ছে একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানান, মাসুম একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসী। পূর্বে সে বিএনপি ও যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তাঁর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে দল থেকেও বহিষ্কৃত হয়। বর্তমানে বনানী ও আশপাশের এলাকায় সে চাঁদাবাজি, মাদক কারবার ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বনানীর অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, মাসুমের চাঁদাবাজিতে তাঁরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানান।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সারোয়ার বলেন, “কেউ মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এর আগে ১৭ এপ্রিল ২০১৬ সালে মোল্লা মাসুম অস্ত্রের মুখে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ে আটকে রাখে। এরপর সেই ব্যবসায়ীর পরিবারের কাছে ফোনে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। অন্যথায় মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ওই দিন রাতে অপহৃতের পরিবার ৭০ হাজার টাকা টাকা দেওয়ার পরে বাকী টাকা আদায়ের জন্য তার জমির দলিল দাবি করে এবং ২ কাঠা জমি লিখে দিতে বলে। নিরুপায় হয়ে পরিবার রাত ১২টার দিকে দলিল হস্তান্তর করে। এক পর্যায়ে তাঁরা জমির অন্যান্য কাগজপত্র দাবি করে। পরে সেই ব্যবসায়ী আলমগীরের স্ত্রী র্যাব অফিসে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করলে অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-১ এর একটি দল মহাখালী নিকেতন সংলগ্ন নিপ্পনের গলির রোজভ্যালি নামক একটি নির্মাণাধীন বিল্ডিং থেকে মোল্লা মাসুমসহ তাঁর ৪ সহযোগীকে গ্রেফতার করে। এ সময় অপহরণের কাজে ব্যবহৃত ৪টি পিস্তল, ৬ রাউন্ড তাজা গুলিসহ ২টি ম্যাগাজিন ও ড্রিল মেশিন উদ্ধার করা হয়।
দৈএনকে/জে .আ
