ধামরাইয়ের লেবু যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে


লেবুর ইউনিয়ন হয়ে উঠেছে ঢাকার ধামরাইয়ের যাদবপুর ও বালিয়া। এ দুই ইউনিয়নের কৃষকরা বাড়ির উঠান থেকে শুরু করে রাস্তার ধার, পরিত্যক্ত ও উঁচুসহ এলাকার পুরো কৃষি জমিতেই চাষ করছেন লেবু। এখানকার উৎপাদিত লেবুই রফতানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে।
ধামরাই সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরের দুটি ইউনিয়নের নাম যাদবপুর ও বালিয়া। এ দুটি ইউনিয়নের কোথাও একখন্ড পতিত জমি নেই। যে দিকেই চোখ যায় শুধু লেবু ক্ষেত আর লেবু ক্ষেত। এখানে লেবু চাষই কৃষকদের আয়ের প্রাধান উৎস। এলাকার ৯৫ ভাগ কৃষকই লেবু চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাই স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও আশেপাশের এলাকার মানুষ যাদবপুর ও বালিয়াকে ‘লেবুর ইউনিয়ন’ বলে ডাকে। এছাড়াও ধামরাইয়ের আমতা, গাংগুটিয়া, চৌহাট ও কুশুরা ইউনিয়নেও লেবুর চাষ হচ্ছে। তবে যাদবপুর ও বালিয়া ইউনিয়নের বাছাই করা লেবুই সবচেয়ে বেশি রফতানি হয়ে থাকে।
ধামরাইয়ে তিন ধরনের লেবুর চাষ হয়ে থাকে, যা স্থানীয়ভাবে এলাচি,কলম্বো ও কাগজি লেবু নামে পরিচিত। এলাচি জাতের লেবু আকারে বড় ও সুগন্ধি, বিচি কম এবং সারা বছরই ফলন হয়। এ জাতের লেবু বিক্রি করে প্রতি বিঘা থেকে বছরে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় হয়। কলম্বো ও কাগজি লেবু আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট ও গোল। এ লেবু বিক্রি করে প্রতি বিঘায় বছরে ৫০-৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। যাদবপুর ইউনিয়নের গাওতারা, আমছিমুর, আমরাইল, গ্রোমগ্রাম, পাইচাল, হরিদাসপুর ও বালিয়া ইউনিয়নের বাস্তা, টেটাইল, পূর্ব বালিয়া গ্রামের প্রায় ৫ হাজার প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা ৩ হাজার ১৫ একর জমিতে লেবু চাষ করেছেন।
ধামরাইয়ের টেটাইল গ্রামের লেবু চাষি মাসুম আহম্মদ জানান, এ বছর তিনি ৩০ বিঘা জমিতে লেবুর চাষ করেছেন। গত দুই বছর লেবু চাষে তেমন লাভ না হলেও এবার তার ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা লাভ হবে। তিনি আরও জানান, ঢাকার কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের লেবু কিনে নেয়ার পর বাছাই করে সেই লেবু মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করে থাকেন। সরকারের কাছে তার দাবি, ধামরাইয়ের কৃষকরা যাতে সরাসরি বিদেশে লেবু রফতানি করতে পারেন সেই ব্যবস্থা গ্রহণের।
শুধু মাসুমই নন তার মতো টেটাইল গ্রামের সাইদুর রহমান, বুদ্দু মিয়া, আশরাফ আলী, আরজু মিয়া, আব্দুল বাছেদ, যাদবপুর ইউনিয়নের গাওতারা গ্রামের আওলাদ হোসেন, আব্দুল জলিল, আমরাইল গ্রামের দুলাল মিয়া লেবুর চাষ করে এখন স্বাবলম্বী।
গাওতারা গ্রামের আওলাদ হোসেন জানান, তিনি ১৯৮৪ সাল থেকে লেবুর চাষ করেন। বর্তমানে ৩৫ বিঘা জমিতে লেবু চাষ করছেন। লেবু বিক্রির আয় থেকে তিনি ৪২ বিঘা জমি, দোতলা বাড়ির মালিক হয়েছেন।
সবজি রফতানিকারক আলী হোসেন জানান, বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় পাঁচশ কোটি টাকার লেবু বিদেশের বাজারে রফতানি হয়ে থাকে। তবে চাহিদা আরও অনেক বেশি। সঠিক পরিবহন ব্যবস্থা না থাকার কারণে চাহিদা অনুযায়ী লেবু রফতানি করা যাচ্ছে না।
লেবু সরবরাহকারী বিল্লাল হোসেন জানান, ৫ বছর ধরে তিনি বিদেশে লেবু রফতানির কাজে জড়িত। প্রথমে কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করে বাছাই করা হয়। এরপর বিদেশে রফতানিকারকের কাছে ঢাকার সূত্রাপুর ও কারওয়ান বাজারে সাপ্লাই দিয়ে থাকেন।
তিনি আরও জানান, জমি থেকে লেবু সংগ্রহ করার পর পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের ওয়্যারহাউসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গ্রেডিং, শটিং, কাটিং ও প্যাকেজিংয়ের পর নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া শেষে রফতানির জন্য বিমানবন্দরে পাঠানো হয়। সারা বছরই ধামরাইসহ বিভিন্ন জেলা থেকে লেবু সংগ্রহ করে বিদেশে রফতানি করেন। এছাড়া লেবুর পাশাপাশি বিভিন্ন বিষমুক্ত সবজিও রফতানি করে থাকেন তিনি। এ কাজে বিভিন্ন ধাপে বহু লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, উচু জমিতে লেবু চাষ করতে হয়। সেদিক থেকে ধামরাইয়ের যাদবপুর, বালিয়া, কুশুরা, গাংগুটিয়া ও চৌহাট ইউনিয়ন লেবু চাষের জন্য বেশ উপযোগী। আর এসব ইউনিয়ন থেকে প্রতি বছর কয়েকশ কোটি টাকার লেবু বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে।
