সোনারগাঁও পৌরসভার আবাসিক সড়কে ভারি যানবাহনের চলাচল, গভীর রাতে আতঙ্কে পৌরবাসী


নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার সোনারগাঁও পৌরসভার অভ্যন্তরীণ সড়ক দিয়ে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে নির্বিঘ্নে চলাচল করছে শিল্প-কারখানার ভারি যানবাহন। স্থানীয় প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষের চোখের সামনে দিয়ে চলমান এই যানবাহন চলাচল এখন পৌরবাসীর জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবাসিক এলাকার নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থায় নেমে এসেছে চরম অব্যবস্থাপনা ও অনিরাপত্তা। মাঝে মাঝেই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।
উপজেলার উদ্ধবগঞ্জ বাজার বটতলা থেকে শুরু করে পৌর এলাকার ভবনাথপুর, জয়রামপুর, কৃষ্ণপুরা, বাড়ী শ্রীরামপুর, গোবিন্দপুর, বাড়ী শ্যাম কুমার, বাগমুছা, লাহাপাড়া হয়ে সোনারগাঁ জি.আর. ইনস্টিটিউশন, মুন্সিরাইল ও ঐতিহাসিক পানাম নগর পর্যন্ত বিস্তৃত আবাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথগুলো বর্তমানে ভারি যানবাহনের চাপে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। অটোরিকশা, সিএনজি ও মিশুক চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে; এমনকি সাধারণ মানুষকেও পায়ে হেঁটে চলতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে।
সোনারগাঁয়ের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত উপজেলা পরিষদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়, কাঁচপুর সার্কেল ভূমি অফিস, সোনারগাঁ থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসসহ অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ব্যাংক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা ও আবাসিক ভবন রয়েছে—যেগুলো এসব ভারি যানবাহনের কারণে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা ও দায়সারা মনোভাবই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। গভীর রাতে শিল্প-কারখানার পণ্যবাহী ট্রাক ও লরি চলাচল করে আবাসিক এলাকার মধ্যে দিয়ে। কোনো প্রকার সড়ক উপযোগীতা ছাড়াই এগুলো চলাচল করছে গহীন অন্ধকারে, যেখানকার রাস্তাগুলোতে নেই পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট বা আলোকসজ্জা। রাতভর ভারি যানবাহনের গর্জনে কেঁপে উঠে এলাকা, আতঙ্কে ঘুমাতে পারে না শিশু-বৃদ্ধ কেউই।
পৌরসভার কর আদায় নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা অজুহাত দেওয়া হলেও বাস্তবে জনসেবা কার্যত নেই বললেই চলে। মাস শেষে বেতন পেলেও কাজের কাজ কিছুই করছে না সংশ্লিষ্ট পৌর কর্তৃপক্ষ—এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। অথচ প্রতি বছর নিয়মিত কর দিতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ জনগণ।
পৌর প্রশাসক ফারজানা রহমান জানান, এখনো প্রায় কোটি টাকা কর আদায় বাকি রয়েছে। তবে, নাগরিকরা অভিযোগ করলে থানার পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধেই উল্টো হয়রানিমূলক আচরণ করা হয় বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে সোনারগাঁয়ের শিল্প-কারখানাগুলো মূলত অবস্থিত বৈদ্যেরবাজার ও বারদী ইউনিয়নের দিকে। সেই দিক থেকে বিকল্প সড়ক থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ ভারি যানবাহন ঘুরে আবাসিক সড়ক দিয়ে চলাচল করছে, যা জনস্বার্থ ও নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু কর্মকর্তার আর্থিক সুবিধা গ্রহণের কারণে এই পরিবহনগুলো নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। মূল সড়ক মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে উদ্ধবগঞ্জ হয়ে বৈদ্যেরবাজার পর্যন্ত মেরামত কাজের জন্য বন্ধ থাকায় বিকল্প সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব আবাসিক সড়ক—যা কোনোভাবেই ভারি যান চলাচলের উপযোগী নয়।
জনমনে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। পৌরবাসী আশা করছেন, জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এই সংকট সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন।
এন কে/বিএইচ/আমির
