তারেক রহমানের কর্মসূচিতে সক্রিয়তায় ক্ষুব্ধ হাফিজ ইব্রাহিম, ছাত্রনেতা বহিষ্কার


বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বোরহানউদ্দিন উপজেলা শাখা কর্তৃক সাচড়া ইউনিয়ন শাখা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠিক সম্পাদক মোঃ আল-আমিন গুরিন্দাকে একটি সাজানো অভিযোগের ভিত্তিতে বহিষ্কার করা হয়েছে। অভিযোগে ‘সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের’ কথা বলা হলেও, বাস্তবে এটি ভোলা-২ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে একক আধিপত্য কায়েম করা হাফিজ ইব্রাহিমের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্বাসযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদল নেতা মোঃ আল-আমিন গুরিন্দা তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় এবং এবিএম ইব্রাহিম খলিলের মতো ত্যাগী নেতার সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত থাকায় হাফিজ ইব্রাহিমের বিরাগভাজন হন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জের ধরেই তাকে বহিষ্কার করানোর পেছনে ইন্ধন দেন হাফিজ ইব্রাহিম।
একইসাথে দেউলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের আরও কয়েকজন দায়িত্বশীল পদাধিকারীকেও সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা দলীয় ভিন্নমত দমন এবং গঠনমূলক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত ১২ জুন (বৃহস্পতিবার) একপাক্ষিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
ছাত্রনেতা মোঃ আল-আমিন গুরিন্দা বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও রাজনৈতিকভাবে প্ররোচিত। হাফিজ ইব্রাহিমের নির্দেশেই আমাকে টার্গেট করে বহিষ্কারের নাটক সাজানো হয়েছে। আমি সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
এ ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তৃণমূলের অনেকেই মনে করছেন, দলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ত্যাগী নেতাকর্মীদের সম্মান আজ হুমকির মুখে।
সাচড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের পরিচিত ও পরীক্ষিত নেতা গুরিন্দাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই বহিষ্কারের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব এবং ব্যক্তি বিদ্বেষের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় ছাত্রদলের একাধিক নেতা-কর্মী।
তারা জানান, আল-আমিন গুরিন্দা দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। মাঠের রাজনীতিতে তার অবস্থান ও জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাফিজ ইব্রাহিমের অনুসারীরা তাকে টার্গেট করেন।
অভিযোগ রয়েছে, হাফিজ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতার মদদে একপক্ষীয় সিদ্ধান্তে আল-আমিন গুরিন্দাকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয় এবং তা অনুমোদনের জন্য ঊর্ধ্বতন মহলে প্রভাব খাটানো হয়। এতে ছাত্রদলের তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনায় সাচড়া ইউনিয়ন ও আশপাশের এলাকার ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, দলীয় স্বার্থে একনিষ্ঠ নেতাদের এভাবে বহিষ্কার করা হলে সংগঠন দুর্বল হবে এবং নেতৃত্বে হতাশা নেমে আসবে।
সূত্র জানায়, বিএনপির আইনজীবী ফোরামের নেতা, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সাবেক ছাত্রদল নেতা এবিএম ইব্রাহিম খলিলের নেতৃত্বে তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন আল-আমিন গুরিন্দা। এই বিষয়টি ভোলা-২ আসনের বর্তমান প্রভাবশালী নেতা হাফিজ ইব্রাহিমের পছন্দ হয়নি। ফলে তিনি উপজেলা ছাত্রদল নেতৃবৃন্দকে নির্দেশনা দিয়ে আল-আমিন গুরিন্দাসহ আরও কয়েকজন ত্যাগী ও নির্যাতিত ছাত্রদল নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারের ব্যবস্থা করেন।
এই সকল নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-পীড়নের শিকার হয়ে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। অথচ আজ বিএনপির ভিতরেই একটি অগণতান্ত্রিক সংস্কৃতির শিকার হতে হচ্ছে তাদের। বর্তমানে ভোলা-২ আসনে হাফিজ ইব্রাহিমের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেউ তার মতের বিরুদ্ধে গেলে দলীয় বাহিনী ব্যবহার করে তাদের ওপর চালানো হয় নিপীড়ন, হামলা ও সামাজিকভাবে কোণঠাসা করার ষড়যন্ত্র।
বিশ্বস্ত সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন এলাকায় হাফিজ ইব্রাহিমপন্থী একটি চক্র ব্যাপক চাঁদাবাজি, জমি দখল ও অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। বালুমহল নিয়ন্ত্রণ ও তরমুজ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও জোর করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসায়ীরা এ চাঁদাবাজ চক্র থেকে রেহাই পাচ্ছেন না, অথচ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
