বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

লালামাই ভাবক-পাড়ায় ভাইয়ের হাতে ভাই নিগৃহীত: পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

লালামাই ভাবক-পাড়ায় ভাইয়ের হাতে ভাই নিগৃহীত: পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ভাবকপাড়া রাজবাড়িতে ঘটেছে এক চাঞ্চল্যকর ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। আপন ভাইয়ের হাতে গুরুতরভাবে জখম হওয়ার পর থানার সহযোগিতায় মাদকাসক্ত সাজিয়ে এক ব্যক্তিকে জোরপূর্বক মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।

ভুক্তভোগী সোলেমান হোসেন সুমন (৪২) এবং অভিযুক্ত বড় ভাই মোস্তফা কামাল দুলাল (৫০) মৃত আবদুল মতিনের ছেলে। সুমন চার ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। দীর্ঘ ১৭ বছর প্রবাসে থেকে দেশে ফিরে তিনি সংসার শুরু করেন। তার এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। প্রবাসজীবনের উপার্জন তিনি দেশে পাঠিয়ে বড় ভাই দুলালের তত্ত্বাবধানে যৌথভাবে পারিবারিক খরচ চালিয়েছেন।

সুমনের অভিযোগ, প্রবাসফেরতের পর তিনি তার জমানো টাকার হিসাব চাইলে বড় ভাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় দুলাল দীর্ঘদিন এলাকায় ক্ষমতাসীন থেকেছেন এবং নানা প্রভাব খাটিয়েছেন।

গত ১০ জুন রাত ১০টার দিকে পরিকল্পিতভাবে সুমনের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এ সময় সুমনের স্ত্রী তার পিতৃগৃহে ছিলেন মেয়ের অসুস্থতার কারণে। একে সুযোগ হিসেবে নিয়ে বড় ভাই দুলাল, তার ছেলে, এবং ভাতিজাসহ ৮-১০ জন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সুমনের ওপর হামলা চালায়। তাকে চাপাতি, ক্রিজ ও হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত সুমন জ্ঞান হারালে তাকে বাড়ির ভেতরে তালা মেরে রাখা হয়।

পরবর্তীতে দুলাল নিজেই ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে জানায় যে সুমন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নিজেই মাথায় আঘাত করেছেন। লালমাই থানার এসআই জোনাব আলী ঘটনাস্থলে গিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় সুমনকে উদ্ধার করেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়ে দুলালের সঙ্গে আঁতাত করে সুমনকে মাদকাসক্ত হিসেবে তুলে ধরে। তাকে লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে পুনর্বাসন কেন্দ্র "যত্নের মায়া"-তে পাঠানো হয়।

সুমনের স্ত্রী জানান, ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে তার স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা হলেও, পরদিন থেকে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ১২ জুন স্বামীর কোনো খোঁজ না পেয়ে তিনি সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে গিয়ে কোনো তথ্য না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হামলার পর দায়সারা চিকিৎসা এবং থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সহযোগিতায় কুমিল্লা শহরের একটি মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রে সুমনকে পাঠানো হয়। পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালক কাজী মামনুল রেজভীর সঙ্গেও অর্থচুক্তির অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে পুলিশের ভূমিকাকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। হামলার ঘটনাটি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত না করে, একজন নিরপরাধ প্রবাসফেরত নাগরিককে মাদকাসক্ত বানিয়ে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানোর মতো ঘটনায় পুলিশি নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সুমনের স্ত্রী এবং স্বজনরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তারা এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে লালমাই থানার পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনাটি নিয়ে অনুসন্ধান চলছে বলে জানা গেছে।

একটি পরিবারিক দ্বন্দ্ব কিভাবে এক ভয়াবহ রূপ নিতে পারে, তার এক হৃদয়বিদারক উদাহরণ এই ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা ও মানবিক দায়িত্ববোধ প্রশ্নের মুখে পড়লে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা কোথায়—এমন প্রশ্ন এখন সচেতন মহলে।


দৈএনকে/জে .আ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

আরও পড়ুন