এত ভয়ংকর কেন আন্দামানের উপজাতিরা


নর্থ সেন্টিনেল, পোর্ট ব্লেয়ার থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দ্বীপটিতে থমকে আছে সময়। আধুনিক সমাজের কোনো সুযোগ-সুবিধাই নেই সেখানে। তবুও সেখানে বসবাস করছে একদল মানুষ। যাদের কাছে আধুনিক মানুষ অর্থাৎ আমরা চরম শত্রু!
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পৃথিবীতে তাদের মতো উপজাতি সম্ভবত একটিও নেই, যারা আধুনিক পৃথিবীর সামান্যটুকুও গ্রহণ করেনি। তাদের সময় আটকে আছে ৬০ হাজার বছর আগের পৃথিবীতে। এখনো তারা আদিম মানুষের মতো প্রায় উলঙ্গ জীবনযাপন করছে।
আগুনের ব্যবহারটুকুও জানা নেই। সেখানকার উপজাতির সংখ্যা হবে ২০০-৪০০ জনের মধ্যেই। এর বেশি কিছুই প্রায় জানা যায় না সেন্টিনেলিজদের নিয়ে।
১২৯৬ সালে মার্কো পোলোর লেখায় উল্লেখ মেলে সেন্টিনেলিজদের। তিনি লিখেছিলেন, এই উপজাতির মানুষরা নরখাদক। এদের চোখ লাল ও তীক্ষ্ণ দাঁত।
এই দ্বীপের বাসিন্দা নয়, এমন কাউকে দেখলেই এরা আক্রমণ করে ও মেরে ফেলে। যদিও ঐতিহাসিকদের মতে, মার্কো পোলো আদৌ আন্দামানে যাননি। সম্ভবত কারও মুখে তিনি এই বিষয়ে শুনেছিলেন।
১৮৮০ সালে ব্রিটিশ নৃতত্ত্ববিদ এম ভি পোর্টম্যানের নেতৃত্বে একটি দল সেখানে গিয়েছিল। এক প্রৌঢ় দম্পতি ও চারটি শিশুকে তুলে আনে তারা। উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে পরীক্ষা নীরিক্ষা করা।
তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, তারা কেউই বেশিদিন বাঁচেনি। আর এ কারণেই সেন্টিনেলিজদের আধুনিক মানুষের প্রতি অবিশ্বাস ও ক্ষোভ বাড়তেই থাকে।
বিগত ৬ শতক ধরে ভারত সরকার তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে গেলেও সাময়িক সাফল্য যা এসেছিল, তা ১৯৯১ সালে। তবে ত্রিলোকনাথ পণ্ডিত ছাড়া আর কারও সঙ্গে তাদের ভাব হয়নি।
২০০৪ সালে সুনামির সময় ভারত সরকার তাদের ত্রাণ দিতে চাইলেও সাহায্যকারীদের তির ছুঁড়ে দূরে যেতে ইশারা করেছিল সেন্টিনেলিজদের একটি দল।
সমুদ্রের বুকে এক নির্জন কোণে অবস্থিত নর্থ সেন্টিনেল। ভৌগোলিক কারণে মেলা নির্জনতার আড়ালে নিজেদের জন্য একটি নিভৃত কোণ বেছে সভ্যতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিন গুজরান তাদের।
আদিম মানুষের মতোই শিকারই এদের জীবিকা। নৃতত্ত্ববিদরা আকাশপথে বা সমুদ্রে নিরাপদ দূরত্ব থেকে যতটুকু দেখতে পেয়েছেন, তা থেকেই এই সব তথ্য মিলেছে। কাছে গেলে মৃত্যু অবধারিত।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
