শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ার নতুন ভাইরাস


করোনা ভাইরাসের পর এবার ভয়ানক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে এক অজানা রহস্যময় রোগ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে শিশুদের। সমীক্ষা করে দেখা গেছে, সাধারণত দশ বছরের কম বয়সী শিশুরাই ভুগছে এই অজানা রোগে।
ফুসফুসের এই রোগ যে মহামারির আকার ধারণ করতে পারে, তা নিয়েও আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
কী কী লক্ষণ রয়েছে এই রোগের? কিভাবেই বা এই রোগ ছড়ায়? শিশুদের কীভাবে এই রোগের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনুমান, চীন থেকেই নাকি এই বিশেষ রোগটি ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। চীনের পর আমেরিকার ওহায়োয় ত্রাস ছড়াচ্ছে এই রহস্যজনক রোগ। নিউমোনিয়ার লক্ষণের সঙ্গে এই রোগের সাদৃশ্য রয়েছে বলে একে অনেকে ‘রহস্যজনক নিউমোনিয়া’ বলেও উল্লেখ করেছেন।
সম্প্রতি ওহায়ো অঞ্চলের বহু শিশু আক্রান্ত হয়েছে ‘রহস্যজনক নিউমোনিয়া’য়। চীনের পর আমেরিকায় প্রথম এই সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দাবি।
ওয়ারেন কাউন্টির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি বছরের অগস্ট মাস থেকেই অজানা রোগটি ছড়াতে শুরু করেছে। গত ৪ মাসে মোট ১৪২ জন শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে সমীক্ষায় জানা গিয়েছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, ফুসফুসের এই রহস্যজনক রোগের নাম ‘হোয়াইট লাং সিনড্রোম’। চিনের পর আমেরিকায় রোগটির প্রাদুর্ভাব চিন্তায় ফেলেছে প্রশাসনকে। অনবরত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা।
ওহায়ো ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ-এর তরফে ‘হোয়াইট লাং সিন্ড্রোম’ নামের রোগটিকে গুরুতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে চিনের হাসপাতালের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়েও। ওহায়োয় যে ভাবে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে, তা এই সংক্রমণের ফলাফল বলে মনে করছেন অনেকে।
চীনে ইতিমধ্যেই একাধিক বার ‘হোয়াইট লাং সিন্ড্রোম’-এর জন্য খবরের শিরোনামে এসেছে। এই রোগের গতিপ্রকৃতি নিয়ে চিন্তায় পড়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এই নিয়ে চীনকে সতর্কও করেছিল সংগঠনটি। এমনকি রোগটি নিয়ে নিয়মমাফিক রিপোর্টও জমা করতে বলা হয়েছিল চীনকে।
আমেরিকার ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এর তরফে জানানো হয়েছে, ‘হোয়াইট লাং সিন্ড্রোম’ রোগের প্যাথোজেন কোনও নতুন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া নয়। চীন, ডেনমার্ক, আমেরিকা এবং নেদারল্যান্ডসসহ একাধিক দেশে এখন নতুন ‘আতঙ্ক’ এই রোগ।
‘হোয়াইট লাং সিনড্রোম’ রোগে সাধারণত ৩ থেকে ৮ বছর বয়সী শিশুরা সংক্রমিত হচ্ছে। আক্রান্ত শিশুদের ফুসফুস পরীক্ষা করে যে ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, তা দেখেই রোগটির নাম রাখা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া নামে এক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ‘হোয়াইট লাং সিন্ড্রোম’ রোগের মূল কারণ। তবে এই রোগের আশঙ্কার মূল কারণ যে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরেও এই রোগ নিরাময় করা যাচ্ছে না।
ডেনমার্কে পরিস্থিতি সবচেয়ে বিপজ্জনক। ‘হোয়াইট লাং সিনড্রোম’ সেখানে যেন এক ‘মহামারি’র চেহারা নিয়েছে বলে দাবি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রশাসনের বক্তব্য, এই মুহূর্তে সংক্রমণের যা ছবি ফুটে উঠেছে তার সঙ্গে করোনা সংক্রমণের আদিপর্বের মিল রয়েছে অনেকটাই। নেদারল্যান্ডসেও এই সন্দেহজনক ‘নিউমোনিয়া’য় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে বলে খবর।
