ভাইরাস'র জন্ম কিভাবে!


ভাইরাস জীব নাকি জড় সেই বিতর্কের যেরকম শেষ নেই, তেমনি এদের উৎপত্তি কীভাবে হলো তা নিয়েও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেই। তবে মোটাদাগে ‘ভাইরাসের উৎপত্তি’ নিয়ে ৩টি ধারণা সবচেয়ে বেশি আলোচিত। এদের আবার গালভরা নামও আছেঃ প্রোগ্রেসিভ হাইপোথিসিস, রিগ্রেসিভ হাইপোথিসিস এবং ‘ভাইরাস ফর্স্ট’ হাইপোথিসিস। একে এই তিনটির ভেতরে ঢোকা যাক!
প্রোগ্রেসিভ হাইপোথিসিস অনুসারে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের রূপান্তরের (Transformation) মাধ্যমে প্রোটিন এবং নিউক্লিক এসিডের সৃষ্টি।
এই জৈব জৌগগুলোই প্রাণের মৌলিক উপাদান। বিজ্ঞানীদের মতে এই উপাদানগুলো থেকেই জলজ পরিবেশে অকোষীয় সরল ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। এই হাইপোথসিসি অনুসারে অজীব উপাদান থেকে জীবের মতো সত্ত্বার উৎপত্তি ঘটেছে বলে একে অগ্রগতিমূলক ধারণা বা প্রোগ্রেসিভ হাইপোথিসিস বলা হয়। তবে কিছু সীমাবদ্ধতা এবং অস্পষ্টতার কারণে এই মতবাদ বর্তমানে গ্রহণযোগ্যতা হারাতে বসেছে।
এবার রিগ্রেসিভ হাইপোথিসিসটা বোঝা যাক। এই মতবাদানুসারে ভাইরাস অন্য কোনো অণুজীব থেকে সৃষ্ট। এক্ষেত্রে ভাইরাসকে রিকেটসিয়া, ক্ল্যামাইডিয়া বা মাইকোপ্লাজমার মতো জীবদের বিবর্তিত রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ধারণার সমর্থকদের মতে, ব্যাকটেরিয়া ডোমেনের কোনো জীব সদস্য অপর কোনো জীবের সাথে মিথোজীবীতার সম্পর্ক তৈরি করে এবং একটা সময়ে গিয়ে ব্যাকটেরিয়াটি ওই জীবের দেহে প্রবেশ করে পরজীবীতে পরিণত হয়।
স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলা এই বাধ্যতামূলক পরজীবীই ভাইরাস। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা মিমি ভাইরাসকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। কারণ Rikettsia prowazekii এর সঙ্গে মিমিভাইরাসের প্রায় সবক্ষেত্রেই সাদৃশ্য রয়েছে। এক্ষেত্রে আদিকোষী থেকে অকোষীয় সত্ত্বার আবির্ভাব ঘটে বলে একে পশ্চাদমুখী ধারণা বা রিগ্রেসিভ হাইপোথিসিস বলা হয়।
আর বাকি রইল ভাইরাস ফার্স্ট মতবাদ।
আগের দুটির চেয়ে এটা একটু ভিন্ন রকম। কারও কারও মতে, সরল আরএনএ থেকেই ভাইরাসের উদ্ভব এই আরএনএ অণু এনজাইমের মতো কাজ করতো এবং এর ফলে বিভিন্ন বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। এই বিক্রিয়াগুলোই ভাইরাসের সূচনা করে। পরবর্তীতে গিয়ে হয়ত মিউটেশনের প্রভাবে ভাইরাসগুলোর সংক্রমণ ক্ষমতা পেয়েছে। ধীরে ধীরে পরিবর্তনের পরিক্রমায় ডিএনএ ও ডিএনএ ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে।
তিনটি ধারণার পেছনেই যুক্তি আছে। আবার ধারণাগুলোর সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তাই ভাইরাসে উৎপত্তি এখন ‘ডিম আগে নাকি মুরগি আগে?’ প্রশ্নের মতো হয়ে গিয়েছে। তবে আধুনিক জীববিজ্ঞানের সাধকেরা আদাজল খেতে এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে নেমে পড়েছে। আশা করা যায়, সামনে আমরা কোনো স্থিতিশীল সমাধান পাবো।
