হঠাৎ কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ভ্রমণ


বিষন্ন মন। কোন কাজে মন বসছে না। সব কিছুতে আনমনা একটা ভাব চলে আসছে। হঠাৎ প্লান করা হল কক্সবাজার যাবো। দুপুর থেকে শুরু করে রাত ১১ টা পর্যন্ত কোন গাড়ী টিকেট ম্যানেজ করা সম্ভব হচ্ছিল না। যদিও এর একদিন আগে টিকেট কাটা ছিল কুয়াকাটার। সেই প্লান বাদ দিয়ে আগের দিন বৃহস্পতিবার প্লান হল কক্সবাজারের। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও যখন টিকেট করা যাচ্ছে না তখন ধরে নিলাম হয়তো যাওয়া হবে না। এদিকে কুয়াকাটা যাওয়ার টিকেট বাতিল করা হয়েছে। তাহলে কি কোথায়ও যাওয়া হচ্ছে না?। এসব ভাবতে ভাবতে অনেক চেষ্টা করে রাত ১ টার টিকেট পাওয়া গেল হানিফ পরিবহনে। যখন টিকেট পাওয়া গেছে তখন রাত ১১:৩০ মিনিট। তরিঘড়ি করে রেডি হয়ে বের হওয়ার পালা। এরপর বের হলাম গাড়ীর জন্য। কলাবাগান স্ট্যান্ডে গিয়ে ১ টার গাড়ী এলো রাত ২ টার সময়। এবার গাড়ীতে উঠে সিটে বসে পড়লাম। সঙ্গে ছোট ভাই তন্ময় সহ স্বামী। তন্ময় তার সিটে, আমরা দুইজন পাশাপাশি সিটে। গল্প আর রাগ অভিমানে যাওয়া হচ্ছে গন্তব্যে। সকাল ৯ টায় পৌছেছি কক্সবাজার। দিনটি শুক্রবার ও তিন দিন সরকারী ছুটি থাকায় পুরো কক্সবাজার উপচেপড়া ভীড়। কোন হোটেল তিল পরিমান খালি নাই। দুই একটা খালি থাকলেও দাম একদম নাগালের বাহিরে। কোন খোজাখুজি করে কোন রকম দুই রুম পাওয়া গেলো তাও দাম অনেক। তবুও থাকতে হবে। এক রাত কোনভাবে কাটিয়ে সেন্টমার্টিনের জাহাজের টিকেট কেটে পরের দিন কুয়াশা ঘেরা ভোর সকালে রওয়ানা হলাম টেকনাফের উদ্দেশ্য। যাক যথাসময়ে টেকনাফ পৌছে জাহাজে উঠে গেলাম। কিন্তু কিভাবে পাবে কেবিন। নিজে গিয়ে কেবিন স্টাফদের সাথে কথা বলে একটা কেবিন ম্যানেজ করেছে। এবার তিনজন কেবিনে গেলাম। জাহাজ ছাড়তে সময় লাগবে। কেবিনে মালামাল রেখে চলে গেলাম জাহাজের ছাদে।
দুইজন মিলে বেশকিছু ছবি তুলে নিলাম জাহাজের ছাদে। এক পাশে টেকনাফ অন্যপাশে মায়ানমার। অপূর্ব দৃশ্য দেখলেই পরান জুড়ায়। গ্রাম্য চমৎকার সৌন্দর্য বেশ উপভোগ করলাম। সময়মতো জাহাজ ছেড়েছে এবার যাচ্ছি গন্তব্যে। মহাসাগরের বুক ছিড়ে সারি সারি কয়েকটি জাহাজ পাল্লা দিয়ে চলছে। সাগরের ঢেউ মাঝে মাঝে জাহাজ দোলছে। এদিকে আমার স্বামী ভয়ে শক্ত হয়ে বসে আছে। তার মুখে কোন কথা নাই। একদম নিস্তব্ধ। আমি আর তন্ময় হাসছি। আবার জিঙ্গেস করছি এতো ভীতু লোকটা সাংবাদিকতা করে কিভাবে। সাগরের ঢেউ দেখে কেউ এতো ভয় পায়?। জাহাজের পিছনে গাঙচিল বা শৃগাল পাখিগুলো কি সুন্দর উড়ছে। দেখতে খুব ভালোই লাগছে। দুপুর ২ টায় জাহাজ পৌছালো সেন্টমার্টিন। সবকিছু খুব উপভোগ করলাম। জাহাজ থেকে নেমে অটো নিয়ে গেলাম থাকার কটেজে। এরআগে খাবার অর্ডার করতে হবে। খাবার আরেকটি কটেজে অর্ডার করে চলে গেলাম থাকার রুমে।
রুমে গিয়ে পোষাক পরিবর্তন করে খেতে আসলাম। খাওয়া দাওয়া শেষ করে বের হলাম সাগরের পাড়ে ঢেউ দেখতে। অপূর্ব সুন্দর সাগরের ঢেউ দেখে লোভ সামলাতে পারি নাই। তাই তিন জন নেমে গেলাম সাগরের নীল পানি ও ঢেউ উপভোগ করতে। প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার সাগরের মাঝে চলে গেলাম। একদিকে সাগরের ঢেউ অন্যদিকে সারি সারি পাথর। খুব সাবধানে অনেক দূর গেলাম। প্রায় দুই ঘন্টা সাগরের মাঝে কাটিয়েছি। পানির সাথে খেলার পাশাপাশি ছবি তুলে নিলাম। সন্ধ্যার আগে আগে হোটেল রুমে ফিরে ভিজে কাপড়চোপড় পরিবর্তন করে বিকালে বের হলাম সাগর পাড়ে হাঁটতে। সাগরের কলকল ধ্বনির তালে তালে ঢেউ ও ঠান্ডা হাওয়া মন জুড়ে গেল। এই আবহাওয়া ও প্রকৃতি ছেড়ে কোনভাবেই মন রুমে আসতে চায়। তবুও আসতে হয়, কারণ সন্ধ্যা নেমে এসেছে। এরপর হোটেল রুমের কাছাকাছি এসে ওয়েদার ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে সাগরের পাড়ে বীচ চেয়ার নিয়ে বসলাম। ঘন্টাখানেক বসতেই শরীর একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে। তারপর খেয়ে রুমে ফিরে আসা। রুমে এসে অনেকক্ষন মোবাইল ফোন দেখে যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে একটু সাগরের পাড় ঘুরেফিরে জাহাজের উদ্দেশ্যে ঘাটে আসলাম। আবার সেই সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের কবলে পড়তে হল। তবে সেন্টমার্টিন যাওয়ার দিন থেকে টেকনাফ ফেরার দিন একটু বেশিই ছিল ঢেউ। স্বামী আজ আরো বেশি ভয়ে ছিল। জাহাজ মনে হয় ডুবে যাবে যাবে অবস্থা। ভয় আর আন্দন নিয়েই সাগর পাড়ি দিয়ে সন্ধ্যায় টেকনাফ পৌছলাম। এখানে এসে রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে ইনানি বীচ আসলাম। ইনানি বীচের কাছাকাছি ইনানি বীচ রিসোর্ট নামের একটি হোটেলে উঠি। এখানে একরাত থাকার কথা থাকলেও স্বামীর ভালো লাগার কারণে দুইরাত থাকা হয়। দিনের শুরু সকাল সকাল নাস্তা করে ইনানি বীচে গিয়ে লাল কাঁকড়া দেখি। সমুদ্রে পাশে গেলে আমার আবার পাথর ও ঝিনুক কুড়িয়ে নেওয়া খুব ভালো লাগে। তাই সমুদ্রে তীরে বিভিন্ন ধরনের পাথর ও ঝিনুক কুড়িয়ে নিলাম। বিকাল বেলা সিএনজি ড্রাইভার বললেন রামু শহরের পাশে চা এর বাগান আছে দেখলে ভালো লাগবে। তাই চা বাগান দেখতে বিকাল বেলা বের হয়ে গেলাম। চা বাগান দেখতে গিয়ে পেলাম রাবার বাগন। চা বাগানের অস্তিত্ব পেলাম না। রাবার বাগান ঘুরেফিরে গেলাম রামু মন্দির দেখতে। রামু স্বর্ণে মন্দির ঘুরে হোটেলে ফিরলাম। সারাদিন এসব করে রাতে এক দুর্ঘটনার কবলে পরি। ব্যাডমিন্টন আমার খুব পছন্দের খেলা। রাতে হোটেলের সামনে ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু করি তিনজন। কিছুক্ষণ খেলার পর ঘর্তে পা পড়ে গিয়ে মারাত্মক জখম হই। প্রচন্ড ব্যাথা পাই। সারারাত ব্যাথায় খুব খারাপ লাগছে। পা ফুলে ঢুপঢুপ হয়েছে। সন্ধ্যায় গাড়ী। রাতে কোন ঘুম নাই। পরের দিন খুব কষ্টে কেটেছে। পা এর ব্যাথা নিয়ে সন্ধ্যায় গাড়ীর জন্য বের হই। অনেক কষ্ট করে ঢাকায় ভোরে পৌছাই। ঢাকায় পৌছেই সকাল সকাল পঙ্গ হাসপাতাল গিয়ে ব্যান্ডেজ করিয়ে বাসায় ফিরেছি। এরপর বাসায় শুয়ে শুয়ে দুই মাস কাটিয়ে দিয়েছি।
আগামী পর্বে কক্সবাজার ও বান্দরবন ভ্রমণ কাহিনী থাকবে………………
