কোপা দেল রে-র ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ
০-১, ১-১, ১-৩ থেকে ৩-৩, ৩-৪ এবং শেষ পর্যন্ত ৪-৪। রিয়াল মাদ্রিদ ও রিয়াল সোসিয়েদাদের মধ্যকার ম্যাচের এই স্কোরলাইনই প্রকাশ করে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে কতটা উত্তেজনাপূর্ণ একটি রাত কেটেছে। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে ১২০ মিনিট পর্যন্ত চলা সেই রাতে কেউ কাউকে পরাজিত করতে পারেনি। তবে রিয়াল মাদ্রিদ তাদের ভাগ্য নিশ্চিত করেছিল প্রথম লেগে সোসিয়েদাদের মাঠে ১-০ গোলে জিতে। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ এগ্রিগেটে তারা কোপা দেল রে-র ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে।
স্প্যানিশ এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠার লক্ষ্যে গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে কার্লো আনচেলত্তির দল ঘরের মাঠে সোসিয়েদাদের মুখোমুখি হয়। রিয়ালের জন্য ফাইনালে পৌঁছতে ড্রই যথেষ্ট ছিল, তবে সোসিয়েদাদকে জিততে হতো অন্তত ২ গোলের ব্যবধানে। প্রথম লেগে সোসিয়েদাদ নিজেদের মাঠে প্রায় সমানে সমান লড়াই করলেও, দ্বিতীয় লেগে তারা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিল। তবে এদিন আক্রমণে সোসিয়েদাদ ছিল আরও ধারালো।
ম্যাচটি ৭১ মিনিট পর্যন্ত ১-১ সমতায় ছিল। এরপর হঠাৎ ঝড় উঠে দুই দলই তিনটি করে গোল হজম করে। রিয়ালের হয়ে সেমিফাইনালের দুই লেগেই গোল করেছেন এন্ড্রিক ফিলিপে। এছাড়া জ্যুড বেলিংহাম, অঁরেলিয়ে চুয়ামেনি এবং অ্যান্তোনিও রুডিগার একটি করে গোল পেয়েছেন। লস ব্লাঙ্কোসরা ২৬টি শট নিয়ে ১০টি লক্ষ্যে রাখতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, সোসিয়েদাদ ১১টি শটের মধ্যে ৫টি লক্ষ্যে রেখেছিল। তাদের পক্ষে ডেভিড আলাবার আত্মঘাতি গোল ছাড়াও আন্দের বাররেনেচিয়া একবার এবং মিকেল ওয়ারজাবাল দু’বার গোল করেছেন।
লা লিগায় খুব বেশি খেলার সুযোগ না পেলেও, রিয়ালের কোচ আনচেলত্তি কোপা দেল রে-তে বরাবরই এন্ড্রিককে মাঠে নামান। এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডও তার প্রতিদান দিয়ে যাচ্ছেন। ম্যাচের শুরুতেই এন্ড্রিক গোলের সুযোগ তৈরি করেন। দুই ডিফেন্ডারের মধ্যে বল উঁচিয়ে ওভারহেড কিক নেন, যদিও সেটি লক্ষ্যে যায়নি। এরপর দুই দলই গোললাইনে গিয়ে একবার করে হতাশায় পড়ে। প্রথমে ভিনিসিয়ুসের শক্তিশালী শট প্রতিহত করেন সোসিয়েদাদের গোলরক্ষক, তারপর প্রতিপক্ষের একটি শট রিয়ালের জালের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
১৬তম মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাক থেকেই ম্যাচে লিড আসে। স্বাগতিক রিয়াল শিবিরে নিস্তব্ধতা নামিয়ে বারেনেচিয়া ওয়ান-অন-ওয়ানে গোলরক্ষক লুনিনকে পরাজিত করেন। বার্নাব্যুকে আবার চাঙ্গা করতে সমতা ফেরানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন এন্ড্রিক। ভিনিসিয়ুসের দুর্দান্ত থ্রু পাস ধরে ডি বক্সে ঢুকে এন্ড্রিক ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে এগিয়ে আসা গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে চিপ শটে গোল করেন। রিয়াল ম্যাচে ফিরে আসে। স্প্যানিশ এই প্রতিযোগিতার চলতি আসরে এই সেলেসাও তরুণ যৌথভাবে সর্বোচ্চ ৫ গোলে অবদান রেখেছেন।
৭১ মিনিট পর্যন্ত ম্যাচে সমতা বজায় ছিল। তার প্রায় দশ মিনিট আগে রিয়ালের সামনে লিড নেওয়ার সুযোগ এসেছিল, কিন্তু সোসিয়েদাদের গোলরক্ষক রেমিরো বেলিংহামকে ব্যর্থ করে দেন। ৭২ মিনিটে আলাবা আত্মঘাতি গোল করে স্বাগতিকদের জন্য বিপদ ডেকে আনেন। প্রতিপক্ষ মিডফিল্ডার মারিনের শট ক্লিয়ার করতে গিয়ে তিনি বল নিজেদের জালে পাঠান। সোসিয়েদাদের পরবর্তী গোলেও এই অস্ট্রিয়ান ডিফেন্ডারের ভূমিকা ছিল। ওয়ারজাবালের শক্তিশালী শট তার পায়ে লেগে দূরের পোস্টে লেগে জালে প্রবেশ করে। ফলে রিয়াল ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়ে।
ম্যাচের ৮২ ও ৮৬ মিনিটে বার্নাব্যু শিবিরের প্রত্যাবর্তন ঘটে। ভিনিসিয়ুসের পাস বক্সে পেয়ে বেলিংহাম নিপুণ শটে ব্যবধান কমান। এরপর কর্নার থেকে আসা বলে চুয়ামেনি হেড করে রিয়ালকে সমতায় ফেরান। এই পরিস্থিতিতে ম্যাচ শেষ হলেই রিয়াল ফাইনালে। কিন্তু নাটকীয়তা তখনও বাকি। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে ওয়ারজাবাল দুর্দান্ত হেডে গোল করেন। অ্যাগ্রিগেটে ৪-৪ সমতা হলে ম্যাচ অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে গড়ায়। ১১৫তম মিনিটে ফল নির্ধারণী গোল আসে। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল জালে পাঠিয়ে রুডিগার জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠেন।
