শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

রাজধানীসহ সারাদেশে তীব্র তাপদাহ: ভোগান্তিতে নিম্ন আয়ের মানুষ

রাজধানীসহ সারাদেশে তীব্র তাপদাহ: ভোগান্তিতে নিম্ন আয়ের মানুষ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

বর্তমানে বাংলাদেশজুড়ে তীব্র তাপদাহের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ডিগ্রি বেশি। এই অস্বাভাবিক গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ, যারা খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে বাধ্য।

রাজধানী ঢাকায় ‘তপ্ত দ্বীপ’ পরিস্থিতিঃ ঢাকায় তাপমাত্রা বেড়ে ৫ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ২০২১ সালের এক গবেষণায় ঢাকার অন্তত ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে ‘হিট আইল্যান্ড’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কংক্রিটের অতিরিক্ত ব্যবহার, সবুজ এলাকা ধ্বংস, জলাশয় ভরাট এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সারাদেশে তাপপ্রবাহের ভয়াবহতাঃ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। তীব্র গরমে সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে এবং হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দেও তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে, যা জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।

নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগঃ বস্তি এলাকায় বসবাসরত মানুষের জন্য এই তাপদাহ আরও কষ্টকর হয়ে উঠেছে। ঢাকার বিভিন্ন বস্তিতে বাসিন্দারা জানান, টিনের ছাউনি ও বাতাসহীন ঘরে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অনেকেই ঘরে থাকতে না পেরে বাইরে খোলা জায়গায় বসে থাকছেন।

মহাখালী সাততলা বস্তির রিকশাচালক আকবর আলী (ছদ্মনাম) বলেন, “ভোর ৬টায় বের হয়েছি রিকশা নিয়ে। প্রথমে কিছুটা ঠান্ডা থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে যেন পিঠ পুড়ে যাচ্ছে। এমন গরম এ বছর আর পড়েনি। গরিব মানুষ রাস্তায় নামতেই হয়, একদিন রিকশা না চালালে পরিবারের চারজনের খরচ চালানো দায়। তাই এত গরম উপেক্ষা করেও রাস্তায় নামতে হয়েছে।”

একই এলাকার দিনমজুর নয়ন মিয়া (ছদ্মনাম) জানান, “আমি প্রতিদিন রাস্তায় দিনমজুরের কাজ করি। হজিরা দৈনিক ৮০০ টাকা। পরিবারে মা’সহ আমরা পাঁচজন। আমি একাই উপার্জন করি, তাই প্রতিদিন কাজে যেতেই হয়। গত এক সপ্তাহ ধরে গরমের চাপটা বেশি। তবে আজকের গরমটা অতিরিক্ত। তারপরও পেটের দায়ে কাজ করতেই হচ্ছে।”

রাজধানীর ফুটপাতে একজন শরবত বিক্রেতা বলেন, “অনেকদিন ধরেই এখানে লেবুর শরবত বিক্রি করি। আগে বিক্রি কিছুটা কম ছিল, এখন গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রিও বেড়েছে। পরিষ্কার পানি ও বরফ দিয়ে শরবত বানাই। সবচেয়ে বেশি খরিদ্দার রিকশাওয়ালা, পাঠাও চালক, সিএনজি চালক ও পথচারীরা। প্রতি গ্লাস দশ টাকায় বিক্রি করি। এখন দুপুর ২টা, এরই মধ্যে প্রায় ২০০ গ্লাস বিক্রি করেছি। আলহামদুলিল্লাহ।”

পাশেই থাকা একজন গেন্ডারির রস বিক্রেতা জানান, “গরমে বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। তবে গেন্ডারি সংগ্রহ করাই এখন কঠিন হয়ে গেছে। চাহিদামতো জোগান দিতে পারছি না।”

স্বাস্থ্যঝুঁকি ও শিক্ষা কার্যক্রমে প্রভাবঃ তাপদাহের কারণে হিট স্ট্রোক, পানিশূন্যতা এবং তাপঘাতের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। এ কারণে কিছু এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসঃ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ১৩ মে পর্যন্ত তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে এবং তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ বা ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)’র ডা. জোবায়ের চিশতী বলেন, পর্যাপ্ত পানি পান করুন, শরীরের পানিশূন্যতা রোধে বেশি করে পানি পান করুন। রোদ এড়িয়ে চলুন: সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রোদে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন। হালকা পোশাক পরুন: সাদা বা হালকা রঙের সুতি কাপড় পরিধান করুন। শিশু ও বৃদ্ধদের যত্ন নিন: পর্যাপ্ত পানি পান করান এবং ঠান্ডা পরিবেশে রাখুন। প্রয়োজনে চিকিৎসা নিন: হিট স্ট্রোক বা তাপঘাতের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

 

নতুন কাগজ/বিএইচ


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন