জীবন-মরণ সংকটে গাজার বাসিন্দারা


গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের দেড় বছরব্যাপী চলমান সামরিক আগ্রাসন ও কঠোর অবরোধে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ মানবিক সংকট। প্রাণহানির পাশাপাশি অঞ্চলটিতে দেখা দিয়েছে মারাত্মক খাদ্যাভাব। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ’র মুখপাত্র জেন্স লারকে জানান, গাজা বর্তমানে বিশ্বের একমাত্র অঞ্চল, যেখানে পুরো জনসংখ্যা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "গাজা এখন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধার্ত স্থান। এটিই একমাত্র অঞ্চল, যেখানে প্রতিটি মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে।"
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি ৯০০টি ত্রাণবাহী ট্রাকের মধ্যে মাত্র ৬০০টি গাজা-ইসরায়েল সীমান্ত অতিক্রমের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতা ও নিরাপত্তাজনিত বাধার কারণে এসব ত্রাণসামগ্রী নিরাপদে গাজার ভেতরে প্রবেশ করানোও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
"আমরা যা নিয়ে যেতে পেরেছি, তার মধ্যে কেবল আটা রয়েছে — যেটি রান্না ছাড়া খাওয়ার উপযোগী নয়," বলেন লারকে।
অন্যদিকে, বিবিসির এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচারের বরাত দিয়ে জানানো হয়, "ইসরায়েলের বাধার কারণেই গাজার মানুষ খাদ্যবঞ্চিত। এটি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।" তিনি বলেন, "শেষ পর্যন্ত ইতিহাসই এর বিচার করবে।"
তবে সাম্প্রতিক এক মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন ফ্লেচার। তিনি বলেছিলেন, "সহায়তা না পৌঁছালে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গাজায় ১৪ হাজার শিশু মারা যেতে পারে।" পরবর্তীতে জাতিসংঘ এই তথ্য সংশোধন করে এবং ফ্লেচার স্বীকার করেন, বক্তব্য দেওয়ার সময় শব্দচয়নে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এক বিবৃতিতে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর প্রতি গাজায় জরুরি ত্রাণ পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে।
তারা জানায়, "গাজায় ক্রমবর্ধমান দুর্ভিক্ষের কারণে মানবিক বিপর্যয় এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।"
এছাড়াও, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দিকেও আহ্বান জানিয়েছে হামাস— যেন তারা ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, অবরোধ তুলে নেয় এবং গাজায় ত্রাণ প্রবেশে সহায়তা করে।
নতুন কাগজ/বিএইচ
