স্বাস্থ্যের জন্য টেস্টিং সল্ট: ক্ষতিকর না নিরাপদ?


খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহৃত টেস্টিং সল্ট বা মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি) নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ও উদ্বেগ রয়েছে। এটি কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর? নাকি নিরাপদ? সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মতামত বলছে, এমএসজি সাধারণত নিরাপদ, তবে কিছু মানুষের জন্য সাময়িক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
টেস্টিং সল্ট বা মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি) সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অথোরিটি (এফডিএ) জানায়, এমএসজি হচ্ছে গ্লুটামিক অ্যাসিড নামে নন-অ্যাসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের (খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করা ছাড়াও আমাদের দেহ যে অ্যামিনো অ্যাসিড উৎপাদন করতে পারে) সোডিয়াম লবণ। বিভিন্ন খাবার যেমন: সামুদ্রিক শৈবাল, সয়া সস, পারমেসান পনির (ইতালীয় শক্ত দানাদার পনির), টমেটো এবং মাতৃদুগ্ধে প্রাকৃতিকভাবেই উচ্চমাত্রায় মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট থাকে।
সামাজিক যোগাযোগসহ বিভিন্নভাবে দাবি করা হচ্ছে টেস্টিং সল্টের কারণে মাথাব্যথা, বুক জ্বালা, গ্যাস্ট্রাইটিস, গ্যাস্ট্রিক আলসার, কোলন ক্যানসার, রেক্টাল ক্যানসার ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে। এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের জনপ্রিয় কিছু নুডলস কোম্পানি ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে এমন বিজ্ঞাপনও চালায় যে, তাদের নুডলসে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয়নি।
টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা শরীরের জন্য সত্যিই ক্ষতিকর? এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল গ্লুটামেট ইনফরমেশন সার্ভিস জানায়, খাবারে নিরাপদে ও কার্যকরভাবেই টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হচ্ছে শতাব্দীর বেশি সময় ধরে। খাদ্য উপকরণ হিসেবে গ্লুটামেটের ব্যবহার নিয়ে বিশ্বব্যাপী শত শত গবেষণা হয়েছে। এসব গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, খাদ্যে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার নিরাপদ। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে টেস্টিং সল্টের ব্যবহার সরকারিভাবে অনুমোদিত।
এদিকে খাদ্যে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার নিরাপদ বলে একই মত দিয়েছে দ্য ইউরোপিয়ান ফুড ইনফরমেশন কাউন্সিল। সংস্থাটি জানায়, শত শত গবেষণা এবং অসংখ্য বৈজ্ঞানিক মূল্যায়নে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় যে, টেস্টিং সল্ট স্বাস্থ্যর জন্য নিরাপদ।
টেস্টিং সল্টকে ‘জেনারেলি রিকোগনাইজড অ্যাজ সেফ’ বা সাধারণভাবে স্বীকৃত নিরাপদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অথোরিটি। যদিও অনেকে নিজেদের টেস্টিং সল্টের প্রতি সংবেদনশীল মনে করেন, তবে বিজ্ঞানীরা এর কোনো প্রমাণ পাননি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন খাবারে প্রোটিন থেকে প্রায় ১৩ গ্রাম গ্লুটামেট গ্রহণ করে, যেখানে খাবারে ফুড অ্যাডেটিভ হিসেবে যোগ করা মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট খাওয়ার পরিমাণ প্রতিদিন মাত্র প্রায় দশমিক ৫৫ গ্রাম।
টেস্টিং সল্টের সঙ্গে ক্যানসারের কোনো সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে সিঙ্গাপুরের গ্রেনেয়াগ্লেস হসপিটাল জানায়, মাথাব্যথা থেকে ক্যানসারসহ নানা রোগের জন্য টেস্টিং সল্টকে দায়ী করা হয়। যদিও গবেষণায় এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, যার মাধ্যমে প্রমাণ করা যায় টেস্টিং সল্ট এসবের জন্য দায়ী।
এছাড়া ফুড স্ট্যান্ডার্ড অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড (এফএসএএনজেড) টেস্টিং সল্টের নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণায় টেস্টিং সল্টের সঙ্গে অসুস্থতা বা মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে এফএসএএনজেডের অনুমতি ছাড়া কোনো ফুড অ্যাডেটিভ ব্যবহার করা যায় না। যদিও কিছু মানুষ বিভিন্ন খাদ্যের প্রতি সংবেদনশীলতা দেখায়, বিশেষ করে হাঁপানির প্রতি। তারা সম্ভবত অন্যান্য গ্লুটামেটের প্রতি সংবেদনশীল। ২০০৩ সালে এই গবেষণা করা হয়।
দিকে কানাডার সরকারি ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, অধিকাংশ মানুষই নিরাপদে উচ্চমাত্রার গ্লুটামেট গ্রহণ করতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, বুকব্যথা, বমি বমি ভাব, দুর্বল বোধ, ঘাড়ের পেছনে অসারতা যা হাত এবং পিঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে, ঘাড়ী বাহু এবং বুকের পেছনে জ্বালাপোড়াসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে এসব উপসর্গ সাময়িক এবং স্বাস্থ্যে বড় ধরনের কোনো প্রভাব ফেলে না। এসব উপসর্গ দেখা যাওয়ার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এই ব্যক্তিরা খালি পেটে সরাসরি ৩ থেকে ৫ গ্রাম টেস্টিং সল্ট খেয়েছিল। সর্বোপরি, মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর টেস্টিং সল্টের কোনো প্রভাব নেই।
দৈএনকে/জে,আ
