বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

ঔষধি গুণে ভরা পেয়ারা পাতা, তাই বাড়ছে দাম

ঔষধি গুণে ভরা পেয়ারা পাতা, তাই বাড়ছে দাম
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

পেয়ারা আমাদের দেশি ফল হলেও এর গাছের পাতার মূল্য এখন আন্তর্জাতিক বাজারে আকাশ ছোঁয়া। শহর কিংবা গ্রামে যেখানে এই পাতা অবহেলায় পড়ে থাকে, সেখানেই আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে এটি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। কারণ, পেয়ারা পাতার রয়েছে অসাধারণ স্বাস্থ্যগুণ যা আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানেও স্বীকৃত।

পেয়ারা পাতা স্বাস্থ্যগুণে ভরপুর: এই পাতায় রয়েছে ভিটামিন সি, ফ্ল্যাভোনয়েড, পলিফেনল, ক্যারোটিনয়েড এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য একে রূপান্তর করেছে প্রাকৃতিক ওষুধে। বিশেষ করে হারবাল চিকিৎসা ও ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে এর চাহিদা বাড়ছে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর: পেয়ারা পাতায় থাকা কোয়ারসেটিন ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সহায়তা করে। নিয়মিত এই পাতা দিয়ে তৈরি চা পান করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়।

হজম ও পেটের যত্ন: এতে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাস ও ডায়রিয়া কমায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, পেয়ারা পাতা ফুটিয়ে খেলে হজমশক্তি উন্নত হয়।

মুখ ও দাঁতের পরিচর্যা: পেয়ারা পাতা চিবানো বা এর পানি দিয়ে কুলি করলে দাঁতের ব্যথা, মাড়ির ইনফেকশন ও মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

বিশ্বজুড়ে চাহিদা: এই স্বাস্থ্যগুণের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোতে পেয়ারা পাতার চা, এক্সট্র্যাক্ট ও ক্যাপসুল আকারে বাজারজাত হচ্ছে। তাই দিন দিন বাড়ছে এর রপ্তানিমূল্য। একসময় অবহেলিত এই পাতাই এখন হয়ে উঠেছে বিশ্ববাজারে ‘সবুজ সোনা’।

ত্বক ও চুলের যত্নে পেয়ারা পাতা: সৌন্দর্যের প্রাকৃতিক সঙ্গী পেয়ারা পাতার স্বাস্থ্যগুণ যেমন অনেক, তেমনি এটি ত্বক ও চুলের যত্নেও এক চমৎকার প্রাকৃতিক উপাদান। এতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে ভিতর থেকে উজ্জ্বল করে তোলে এবং বলিরেখা কমাতে সহায়তা করে। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের জেল্লা বাড়ে। অপরদিকে, চুল পড়া রোধ ও চুলের গোড়া শক্ত করতে এটি কার্যকরভাবে কাজ করে। পেয়ারা পাতা ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে মাথা ধুলে স্ক্যাল্প থাকে পরিষ্কার ও সুস্থ।

ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা: পেয়ারা পাতার নির্যাসে থাকা লাইকোপিন ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র‍্যাডিকেল থেকে শরীরকে রক্ষা করে। গবেষণায় জানা গেছে, এটি ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারে।

আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা: যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে প্রাকৃতিক ও হারবাল পণ্যের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে। এই সুযোগে পেয়ারা পাতার চা, এক্সট্র্যাক্ট, ক্যাপসুল, তেল ও ক্রিম জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মার্কিন বাজারে শুকনো পেয়ারা পাতার এক প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১০-২০ ডলারে। বাংলাদেশ বা ভারতের মতো দেশে এই পাতা অবহেলায় ঝরে পড়লেও বিদেশে তা এখন সোনার দামি!

রপ্তানি সম্ভাবনা: দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে বাংলাদেশ, এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। উদ্যোক্তারা পেয়ারা পাতা সংগ্রহ করে শুকিয়ে, গুঁড়ো করে বা চা প্যাকেট হিসেবে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারেন। এতে কৃষি-উৎপাদকদের আয় বাড়বে এবং দেশের অর্থনীতিতেও নতুন খাত উন্মোচিত হবে।

ব্যবহারবিধি:

  • চা: ৫-৬টি কচি পাতা ফুটিয়ে ছেঁকে পান করুন।  
  • ত্বকে: বেটে পেস্ট বানিয়ে দাগ বা ব্রণর জায়গায় লাগান।  
  • চুলে: পাতার ফোটানো পানি দিয়ে মাথা ধুলে চুল পড়া কমে।

সতর্কতা:  অতিরিক্ত ব্যবহার পেটের সমস্যা বা ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে বা ওষুধ খাচ্ছেন, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সবসময় প্রাকৃতিক বলেই নিরাপদ ধরে নেওয়া ঠিক নয়। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে পেয়ারা পাতা হয়ে উঠতে পারে সৌন্দর্য ও সুস্থতার অন্যতম সহায়ক।


দৈএনকে/জে .আ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ