শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

যেভাবে বুঝবেন আপনি মানসিক নির্যাতনের শিকার

যেভাবে বুঝবেন আপনি মানসিক নির্যাতনের শিকার
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

ভালোবাসার সম্পর্ক মানেই পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস আর যত্ন। কিন্তু কখনো কখনো সেই যত্নই রূপ নিতে পারে মানসিক কিংবা শারীরিক নির্যাতনে।

ভালোবাসার সম্পর্ক মানেই পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস আর যত্ন। কিন্তু কখনো কখনো সেই যত্নই রূপ নিতে পারে মানসিক কিংবা শারীরিক নির্যাতনে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে নির্যাতন বলতে এখনো শুধুমাত্র শারীরিক নিগ্রহকেই বোঝানো হয়। অথচ মানসিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতনও সমানভাবে ক্ষতিকর, এবং অনেক সময় তা আরও নিঃশব্দ ও গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে।  

সম্পর্কের জটিলতা ও মানসিক নির্যাতন নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক। বিশেষ করে এমন সম্পর্কের লক্ষণ ও তা থেকে উত্তরণের পথ নিয়ে মতামত দিয়েছেন মনোবিজ্ঞানী ও সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ নেহা পরাশর।

যেভাবে বুঝবেন আপনি মানসিক নির্যাতনের শিকার: সবাই সম্পর্কের টানাপড়েনকে স্বাভাবিক ভাবলেও কিছু আচরণ স্পষ্টভাবে নির্যাতনের ইঙ্গিত দেয়। যেমন:-

সব সময় ভয় ও অস্থিরতা: যদি মনে হয়, সঙ্গীকে খুশি রাখতে প্রতিটি শব্দ ভাবতে হয় কিংবা ভুল কিছু বললে তিনি রেগে যাবেন তাহলে সেটা নির্যাতনের লক্ষণ।
আপনার অনুভূতি অস্বীকার করা: “তুমি বাড়াবাড়ি করছো”, “সব সময় ভুল বোঝো”—এই কথাগুলো আপনার আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে দেয়।
অপমান ও উপেক্ষা: বারবার ছোট করে কথা বলা, আপনার আবেগকে অবহেলা করা এক ধরনের মানসিক শোষণ।

সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: বন্ধু-বান্ধব, পরিবার বা সহকর্মীদের থেকে আপনাকে আলাদা করে রাখার চেষ্টা করলে তা সম্পর্কের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত দেয়।
অর্থনৈতিক নির্যাতন: খরচের ওপর নিয়ন্ত্রণ, কাজ করতে না দেওয়া কিংবা টাকা-পয়সা দিয়ে হুমকি দেওয়া—সবই অর্থনৈতিক শোষণ।
শারীরিক সহিংসতা: শুধু মারধর নয়, চিৎকার, ভয় দেখানো কিংবা ভয়ভীতিও শারীরিক সহিংসতার মধ্যে পড়ে। এক জরিপ অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৪৯ বছর বয়সী বিবাহিত নারীদের ৩২ শতাংশই স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিনের মানসিক নির্যাতন একজন মানুষের আত্মসম্মান, আত্মবিশ্বাস এমনকি সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকেও ভেঙে দেয়। 

মানসিক নির্যাতনের প্রভাব: মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিনের মানসিক নির্যাতন একজন মানুষের আত্মসম্মান, আত্মবিশ্বাস এমনকি সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাকেও ভেঙে দেয়। অনেকেই বিষণ্নতা, উদ্বেগ কিংবা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার-এ আক্রান্ত হন। ‘দ্য ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ইন্ডিয়ান সাইকোলজি’র এক গবেষণায় দেখা গেছে, বহু ভারতীয় নারী এই নির্যাতনকে ‘স্বাভাবিক’ বলে মেনে নেন যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

এই পরিস্থিতি মোকাবেলার উপায় যা করবেন: 

নিজের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিন: মন বললে কিছু একটা ঠিক নেই—তবে সেটা ভুলে যাবেন না।
নীরবতা ভাঙুন: বন্ধু, পরিবার কিংবা কাউন্সেলরের সঙ্গে কথা বলুন। আপনার কণ্ঠই হতে পারে মুক্তির প্রথম ধাপ।
প্রমাণ রাখুন: নির্যাতনের ঘটনা লিখে রাখুন বা অডিও রেকর্ড করুন, যা ভবিষ্যতে সহায়তা করতে পারে।
সহায়তা নিন: পেশাদার মনোবিদ, হেল্পলাইন কিংবা সহায়তা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
নিজেকে দোষ দেবেন না: আপনি এই নির্যাতনের জন্য দায়ী নন। নিজের প্রতি সদয় হোন এবং ধৈর্য ধরুন।

ভালোবাসা মানে শান্তি, সঙ্গ নয় যন্ত্রণার। যদি আপনি এমন এক সম্পর্কে থাকেন, যেখানে প্রতিদিন নিজেকে হারিয়ে ফেলছেন তবে চুপচাপ থেকে তা সহ্য করবেন না। প্রয়োজনে কোনও কাউন্সিলের সাহায্য নিন।


দৈএনকে/জে,আ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন