বিসিবির হাল ধরেই বদলের ডাক, বুলবুলের লক্ষ্য ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি’


বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। দেশের ক্রিকেটকে কাঠামোগতভাবে আরও এগিয়ে নিতে চান তিনি—যা শুধু জাতীয় দল নয়, উপকৃত করবে ঘরোয়া ক্রিকেট ও তরুণ ক্রিকেটারদেরও।
সম্প্রতি সমকাল পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বুলবুল বলেন, দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের ক্রিকেটে কাজে লাগাতে চান তিনি। তার ভাষায়, "আমি শুধু একজন ক্রিকেটার ছিলাম না, আমি চেষ্টা করেছি ক্রিকেটের পেছনের কাজগুলো নিয়েও শিখতে ও বুঝতে।"
তিনি জানান, কোচিং ও প্রশাসনিক দুই ক্ষেত্রেই তিনি নিজেকে তৈরি করেছেন। "অস্ট্রেলিয়ায় কোচিংয়ের লেভেল ওয়ান, টু ও থ্রি সম্পন্ন করেছি। এরপর ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউট অব স্পোর্টস থেকে নিয়েছি কোচিংয়ের মৌলিক প্রশিক্ষণ," বলেন বুলবুল।
এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলে (এসিসি) সাড়ে আট বছর ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি, যেখানে তার মূল দায়িত্ব ছিল সদস্য দেশগুলোর ক্রিকেট বোর্ডগুলো কীভাবে কাজ করে তা পর্যবেক্ষণ ও উন্নয়নমূলক প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা।
বুলবুল বিশ্বাস করেন, এই অভিজ্ঞতাগুলো তাকে বিসিবিতে একটি ফলপ্রসূ ও পেশাদার কাঠামো গড়তে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, "আমি চাই একটি কার্যকর ও স্বচ্ছ বোর্ড গড়ে তুলতে, যেখানে উন্নয়ন পরিকল্পনা শুধু কাগজে-কলমে নয়, মাঠেও বাস্তবায়িত হবে।"
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ১৭তম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দৃশ্যমান পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগোচ্ছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও দেশের প্রথম টেস্ট দলের নেতা এবার নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাঠের বাইরের বড় এক মিশনে—বাংলাদেশ ক্রিকেটের কাঠামোগত ও কৌশলগত পুনর্গঠন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলে (আইসিসি) কাজ করার সময়ের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বুলবুল জানান, গবেষণাভিত্তিক কাজই ছিল তার মূল দায়িত্ব। "আইসিসিতে আমার কাজ ছিল কৌশল নির্ধারণ ও সহযোগী দেশগুলোতে তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা তৈরি করা। আফগানিস্তানকে পূর্ণ সদস্যে উন্নীত করার প্রক্রিয়ায় আমি সক্রিয় ছিলাম," বলেন তিনি। এছাড়াও তিনি নেপাল, ওমান, হংকং, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ প্রায় ২০টি দেশের ক্রিকেট উন্নয়ন কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন।
এই আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এখন দেশের ক্রিকেটে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিবর্তন আনতে চান বুলবুল। তার ভাষায়, "আমি এই অভিজ্ঞতার একটি 'প্যাকেজ' বাংলাদেশকে দিতে চাই—যেটা শুধু উন্নয়ন নয়, টেকসই ক্রিকেট কাঠামো গড়ে তোলার একটি রূপরেখা।"
সম্প্রতি বিসিবির একটি গুরুত্বপূর্ণ সভায় নিজের পরিকল্পনা নিয়ে বিশদ প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন তিনি। সভাটি ছিল সাড়ে চার ঘণ্টার, যেখানে বুলবুল নিজেই উপস্থাপন করেন ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি’ নামের একটি কৌশলগত পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার তিনটি মূল স্তম্ভ—শতভাগ সততা, শতভাগ পারফরম্যান্স ও শতভাগ লক্ষ্য পূরণ।
বুলবুল জানান, এই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে চারটি প্রোগ্রাম চালু করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে দেশের ক্রিকেটের উন্নয়ন কার্যক্রম, খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা, হাই পারফরম্যান্স ইউনিট ও বোর্ড পরিচালনার স্বচ্ছতা একীভূতভাবে পরিচালনা করা হবে।
উল্লেখ্য, বিসিবির সাবেক পরিচালক ফারুক আহমেদকে অপসারণের পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ঘোষণা অনুযায়ী দেশের ক্রিকেট প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে আসেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। মাঠে দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া এই কৃতী ক্রিকেটার এখন মাঠের বাইরের নেতৃত্বে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ গড়ার পথে।
