হামজার আগমনে নতুন জোয়ার ফুটবলে


সোমবার সকালটা যেন অন্যরকম ছিল। ঢাকা শহরের ব্যস্ত রাস্তায় তখনো যানজট, কিন্তু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে জমে ওঠা মানুষের ভিড় ছিল একদমই ভিন্ন কারণে। শত শত মানুষ অপেক্ষায়—মনে যেন একটাই প্রশ্ন, “তিনি কি এসেছেন?”
শেষ পর্যন্ত বিমানবন্দরের গেট দিয়ে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলেন হামজা দেওয়ান চৌধুরী। ঘিয়ে রঙের জ্যাকেট, কালো থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট, আর শান্ত-আত্মবিশ্বাসী মুখ—এই মানুষটিই যেন হয়ে উঠেছেন নতুন এক ফুটবল স্বপ্নের প্রতীক। অনেকেই বলছেন, গত এক দশকে এমন আগ্রহ, এমন উদ্দীপনা বাংলাদেশের ফুটবলে দেখা যায়নি।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এখন বাংলাদেশের জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভারতের বিপক্ষে অভিষেকের পর এবার প্রথমবারের মতো দেশের মাঠে খেলতে নামবেন তিনি। ৪ জুন ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ এবং ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচকে ঘিরে এখন উত্তেজনার পারদ চরমে।
শুধু হামজা নন, কানাডা থেকে আসছেন শমিত সোম, আছেন ফাহমিদুল ইসলাম, এমনকি আলোচনায় রয়েছেন ইংল্যান্ডপ্রবাসী কিউবা মিচেলও। কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার অধীনে পুরো দল এখন প্রস্তুত হচ্ছে ঘরের মাঠে নিজেদের প্রমাণ করতে। ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচটিকে অনেকে প্রস্তুতি বললেও এটি হবে বাস্তব মঞ্চে দলের ছন্দ খুঁজে পাওয়ার উপলক্ষ।
হামজা ইতোমধ্যেই নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। ঢাকায় পৌঁছে কোনো বিশ্রাম না নিয়ে সরাসরি অনুশীলনে যোগ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন—এই দলে তিনি কেবল অতিথি নন, বরং নেতৃত্ব দিতে এসেছেন।
বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ক্ষণিক কথোপকথনে তাঁর মন্তব্য ছিল সংক্ষিপ্ত কিন্তু অর্থপূর্ণ:
“এই দলটা দারুণ সম্ভাবনাময়। সামনে বড় সুযোগ আছে। আমরা প্রস্তুত।”
পরদিন রাতে টিম হোটেল থেকে এক ভিডিও বার্তায় দেশবাসীকে তিনি বলেন:
“আসসালামু আলাইকুম। বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলা আমার জন্য গর্বের। আপনাদের দোয়া ও সমর্থন চাই। ইনশাআল্লাহ, মাঠে ফলাফল দিয়ে সেটা ফিরিয়ে দিতে পারব।”
এদিকে সিঙ্গাপুর ম্যাচ ঘিরে টিকিট বিক্রির হিড়িকে প্রমাণ হয়ে গেছে—ফুটবলে আগ্রহ ফিরছে। যদিও অনলাইনে অনেকেই টিকিট পাননি, তাই তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আটটি বিভাগীয় শহরে বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা করেছে বাফুফে। সেখানে ফ্যান জোনে থাকবে গান, ধ্বনি, ঢোল, আর লাল-সবুজের ঢেউ।
এটা কেবল একটি ম্যাচ নয়, এটা বাংলাদেশের ফুটবলে এক নতুন অধ্যায়ের শুরু।
হামজারা এখন আর বিদেশি নয়, তারা লাল-সবুজের গর্ব।
