মশা কেন কিছু মানুষকে বেশি কামড়ায়?


প্রতিবছর প্রায় ৭০ কোটি মানুষ মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হন। এসব রোগে প্রতিবছর সাড়ে সাত লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
মশা আমাদের সবার জন্যই বিরক্তিকর। কিছু মানুষকে কেন মশা বেশি কামড়ায়? তবে দেখা যায়—কিছু মানুষ মশার কাছে যেন বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। একবার শরীরের উন্মুক্ত ত্বক খুঁজে পেলেই মশারা তাদের সুচের মতো শুঁড় ব্যবহার করে রক্ত চুষে নেয়। কিন্তু কেন কিছু মানুষ মশার বেশি টার্গেটে পরিণত হন?
গবেষকরা বলছেন, এর পেছনে থাকতে পারে ঘ্রাণ বা গন্ধের রহস্য। সম্প্রতি সেল নামক সাময়িকীতে এ সংক্রান্ত গবেষণাটি প্রকাশিত হয়।
আমেরিকার রকফেলার ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ২০২২ সালে একটি গবেষণা চালান। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষের ত্বকে নির্দিষ্ট কিছু অ্যাসিডের মাত্রা বেশি থাকে তারা মশাদের কাছে ১০০ গুণ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে স্ত্রী এডিস ইজিপ্টাই জাতের মশা তাদেরকে বেশি টার্গেট করে। এই মশা ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার ও জিকা ভাইরাসের বাহক।
গবেষকরা জানান, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের হাতের ওপর নাইলনের মোজা পরিয়ে ত্বকের স্বাভাবিক ঘ্রাণ সংগ্রহ করা হয়। এরপর এই মোজাগুলো কেটে মশা-ধরা যন্ত্রের ভেতরে স্থাপন করা হয়।
গবেষণার প্রধান লেসলি ভসহল জানান, একটি নির্দিষ্ট নমুনার প্রতি মশাদের আকর্ষণ ছিল সবচেয়ে বেশি। এই ব্যক্তিকে গবেষণায় ‘সাবজেক্ট ৩৩’ নামে অভিহিত করা হয়।
ভসহল বলেন, রাসায়নিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে এই ব্যক্তি বা ‘অত্যন্ত আকর্ষণীয়’ গ্রুপের মানুষের ত্বকে কার্বক্সিলিক অ্যাসিডের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।
গবেষণায় বলা হয়, ‘ত্বকের ঘ্রাণে কার্বক্সিলিক অ্যাসিডের মাত্রা এবং মশা আকর্ষণের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ কিছু জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের কারণেও এই অ্যাসিড বেশি নির্গত হতে পারে।’
তবে বিষয়টি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি, কেন মশারা এই রাসায়নিকের প্রতি এতটা টান অনুভব করে। গবেষকদের ধারণা, প্রতিটি মানুষের ত্বকের নিজস্ব মাইক্রোক্লাইমেট বা পরিবেশ এতে ভূমিকা রাখে।
গবেষকরা জানান, তাঁরা এখনও সেই রাসায়নিকগুলো মানুষের ত্বক থেকে সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে ফেলার উপায় খুঁজে পাননি। তাই সরাসরি প্রমাণ মেলেনি যে, এগুলো ছাড়া মশারা আকর্ষিত হয় না।
গবেষণাটিতে আরও বলা হয়, মানব ত্বকের ঘ্রাণ অনেক জটিল—এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক থাকে, যার প্রতিটির জন্য আলাদা বিশ্লেষণ পদ্ধতি দরকার। এই গবেষণায় শুধু কার্বক্সিলিক অ্যাসিডের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
দৈএনকে/জে,আ
