শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

গাজার ঈদ আর্তনাদে ভরা: ঈদের দ্বিতীয় দিনেও নিহত অন্তত ৫০

গাজার ঈদ আর্তনাদে ভরা: ঈদের দ্বিতীয় দিনেও নিহত অন্তত ৫০
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

যেখানে ঈদুল আজহা হয় আনন্দ, ত্যাগ আর সহানুভূতির উৎসব-সেখানে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার ঈদ যেন রক্ত, কান্না ও ধ্বংসের সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছরও অবরুদ্ধ গাজায় ঈদের দিনগুলো কেটেছে বোমার আওয়াজ আর জানাজার কাফনে। ঈদের দ্বিতীয় দিনেই ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন মানুষ-যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

মানুষই এখানে ‘কোরবানি’ 

বিশ্বজুড়ে ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির মাধ্যমে মানুষ সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে, গরিব-দুস্থের মুখে হাসি ফোটায়। অথচ গাজায় এখন কোরবানির পশু নয়, বরং রক্তাক্তভাবে আত্মাহুতি দিচ্ছে নিরপরাধ শিশু, নারী ও পুরুষ। গাজার অলিগলি এখন রক্তের নদী, কাঁটার মালা নয়-জড়ো হয়েছে কফিনের সারি।

যেসব শিশুরা নতুন জামা পরে ঈদগাহে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল, তাদের কেউ আজ হাসপাতালের মেঝেতে, কেউ ধ্বংসস্তূপের নিচে। নামাজের জায়গা তো দূরের কথা, বহু এলাকায় ঈদগাহর অস্তিত্বই আর নেই-সেগুলো মিশে গেছে ধুলো ও ধ্বংসে।

বিশ্বনেতৃত্বের নীরবতা: সবচেয়ে বড় সহিংসতা?

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে-এই হত্যাযজ্ঞের দায় কার? শুধুই কি দখলদার বাহিনীর? নাকি সেইসব ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর, যারা মানবাধিকারের বুলি আওড়ায়, কিন্তু গাজায় গণহত্যার সময় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে?

আবারও সামনে এসেছে মুসলিম বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তা। অনেক মুসলিম রাষ্ট্রের শীর্ষনেতারা কেবল বিবৃতি দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছেন, কার্যকর কোনো কূটনৈতিক পদক্ষেপ বা চাপ প্রয়োগের নজির নেই।

ড. হানান আশরাওয়ি স্পষ্ট করে বলেন, “প্রতি ঈদেই গাজা কাঁদে, আর বিশ্ব থাকে নীরব। এই নীরবতাই সবচেয়ে বড় সহিংসতা।”

আর্চবিশপ দেশমন্ড টুটু ফাউন্ডেশনও এক বিবৃতিতে বলেছে, “একটি ধর্মীয় উৎসবে যখন শিশুর কান্না, ধ্বংসস্তূপে প্রার্থনা আর পবিত্র দিনে বোমা পড়ে-তা শুধু অন্যায় নয়, বরং ঈশ্বরকেও অশ্রদ্ধা।”

মার্কিন অধিকারকর্মী কোরনেল ওয়েস্ট বলেন, “এই রক্তভেজা ঈদ আমাদের সকলের বিবেকের পরীক্ষা। কেউ কোরবানি দেয় আত্মশুদ্ধির জন্য, আর কেউ মানুষ হত্যা করে দখলদারিত্ব বজায় রাখার জন্য।”

‘আমার বাবা-মায়ের রক্তের দায় কে নেবে?’

এই প্রশ্নটা উঠে আসে এক গাজা-নিবাসী শিশুর কণ্ঠে, যার বাবা-মা দুজনেই নিহত হয়েছেন ঈদের সকালে। এই একটি প্রশ্ন যেন সমগ্র বিশ্ব ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়-এই দায় শুধুমাত্র একটি দেশের নয়, বরং গোটা নীরব বিশ্বব্যবস্থার।

আমরা যারা প্রতিদিন গাজাবাসীর রক্তমাখা ছবি দেখে চোখ ফিরিয়ে নিই, নিজেদের নিরুপায় মনে করে দায় এড়াতে চাই-আমরাও কি সম্পূর্ণ দায়মুক্ত?

একটি প্রশ্ন, যা তাকবিরকেও ছাপিয়ে যায়

ঈদের দিনে এমনই এক প্রশ্ন যেন আকাশে ধ্বনিত হয়, “আর কত ঈদ আসবে যেখানে কেউ বুকচাপা কান্না লুকাবে, আর কেউ কবরস্থানে প্রিয়জন খুঁজবে?” এই প্রশ্নের উত্তর একদিন ইতিহাসই দেবে। এবং সেদিন, যারা আজ মুখে মানবতার কথা বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, তাদের মুখোশ খুলে যাবে-তাদেরও জবাব দিতে হবে।


এন কে/বিএইচ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন