শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

‘সবকিছু কাঁপছিল’—ইরানের হামলায় ইসরায়েলজুড়ে বিস্ফোরণের তাণ্ডব

‘সবকিছু কাঁপছিল’—ইরানের হামলায় ইসরায়েলজুড়ে বিস্ফোরণের তাণ্ডব
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

ইরানের পাল্টা মিসাইল হামলায় টালমাটাল অবস্থা ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে। একাধিক স্থানে ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠেছে আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে সামরিক ঘাঁটি পর্যন্ত। রাতজাগা আতঙ্কে কাটছে সাধারণ মানুষের সময়।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, ইরানের ছোড়া ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল একযোগে হামলা চালিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন শহরের ওপর। এর মধ্যে তেলআবিব, হাইফা এবং আশকেলন শহরে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

একজন ইসরায়েলি বাসিন্দা, যিনি তেলআবিবের একটি উপশহরে থাকেন, নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন—

“মনে হচ্ছিল, পুরো শহরটা কাঁপছে। জানালার কাচ ভেঙে পড়েছে, বাচ্চারা আতঙ্কে চিৎকার করছে। এমনটা আগে কখনও দেখিনি।”

ইসরায়েলের জরুরি বিভাগগুলো দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রগুলো খুলে দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন বাসিন্দাদের বাংকারে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের এই হামলা 'অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩'–এর অংশ, যা সরাসরি ইসরায়েলের সাম্প্রতিক ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর জবাব। পরিস্থিতি যে দ্রুত আরও বিস্ফোরক হয়ে উঠছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক, ধ্বংস এবং আগুনের হলকা। হামলার সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ দেখা গেছে রাজধানী তেলআবিবে, যেখানে একাধিক শক্তিশালী বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে উঁচু ভবন ও রাস্তা।

আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধসে পড়া এক ভবনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা উদ্ধারকাজ চালিয়েছেন ইসরায়েলি দমকলকর্মীরা।

সেখানে অবস্থান করা বাসিন্দা চেন গ্যাবিজন নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন,

“আমরা সাইরেন শুনেই নিচতলায় দৌড়াই। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পুরো ভবন। জানালার কাচ উড়ে যায়। ধোঁয়া আর ধুলায় কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। সময়মতো না গেলে হয়তো আজ বেঁচে থাকতাম না।”

ইসরায়েলের দাবি: তিনজন নিহত, বহু আহত
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামলায় কমপক্ষে তিনজন নিহত এবং বেশ কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বহু আহতকে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ইরানের সামরিক ঘোষণাঃ ১৫০টি স্থানে একযোগে হামলা
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (IRGC) উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমাদি বাহিদি জানান,

“অপারেশন ‘ট্রু প্রমিস থ্রি’-এর আওতায় আমরা ইসরায়েলের ১৫০টিরও বেশি সামরিক ও কৌশলগত স্থাপনায় হামলা চালিয়েছি।”

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, হামলার মূল লক্ষ্য ছিল নেভাতিম ও ওভদা বিমানঘাঁটি, যেখান থেকে ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে তাদের আগের হামলা চালায়।

এছাড়া লক্ষ্যবস্তু ছিল:

টেল নোফ ঘাঁটি (তেলআবিবের কাছাকাছি),

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়,

এবং বিভিন্ন অস্ত্রগুদাম ও সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ড ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা
হামলার ফলে কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক অগ্নিকাণ্ড এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা দেখা দিয়েছে। উদ্ধারকাজে নামে সেনা, পুলিশ ও জরুরি পরিষেবা বাহিনী।

ইরানের বার্তা: “এটি ছিল প্রতিরোধের শুরু মাত্র”
ইরানি সামরিক বাহিনীর বক্তব্য অনুযায়ী, এই প্রতিক্রিয়া ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা ইরানি ভূখণ্ডে চালানো হামলা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও সামরিক কমান্ডার হত্যার জবাব। তারা আরও ইঙ্গিত দিয়েছে—এই পাল্টা প্রতিশোধমূলক কার্যক্রম এখনও শেষ হয়নি।
 


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন