থামছে না ইরান-ইসরায়েল সংঘাত, সামনে দীর্ঘ যুদ্ধের শঙ্কা


মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান। ১৩ জুন শুক্রবার রাতের আঁধারে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। অভিযানের লক্ষ্য ছিল শতাধিক সামরিক ও কৌশলগত স্থাপনা।
এই সামরিক অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’—যার মাধ্যমে ইসরায়েল মূলত ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমে বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে চেয়েছে, বলে দাবি আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের।
হামলার পেছনের প্রেক্ষাপট
পশ্চিমা দেশগুলোর দীর্ঘদিনের অভিযোগ, ইরান গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। যদিও তেহরান সবসময় এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে, দাবি করে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে।
তবে গত কয়েক মাসে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতা বাড়ায় ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। আর তারই প্রতিক্রিয়ায় এই অভিযানে নামল ইসরায়েল, এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা।
প্রধান টার্গেট ছিল গবেষণা ও সামরিক স্থাপনা
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সূত্রে জানা গেছে, পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র, সামরিক ঘাঁটি, ক্ষেপণাস্ত্র ডিপো ও কমান্ড সেন্টারসহ শতাধিক স্থাপনায় আঘাত হানে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী।
তেহরানের পাশাপাশি ইসফাহান, ফোর্ডো ও নাতাঞ্জেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে—যা ইরানের পরমাণু কর্মসূচির অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বাড়ছে উত্তেজনা
এই অভিযান শুধু ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ককেই নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যকেই এক নতুন উত্তপ্ত অধ্যায়ে নিয়ে গেছে। হামলার পরপরই ইরান হুঁশিয়ারি দেয়, এর প্রতিক্রিয়া ‘শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে নয়, কূটনৈতিকভাবেও’ দেওয়া হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের ইঙ্গিত হতে পারে, যার প্রভাব পড়বে বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও জ্বালানিবাজারেও।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ও সামরিক সংঘাতের প্রেক্ষাপটে, সৌদি আরব মানবিক সহায়তার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইরানের ওপর ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পরিপ্রেক্ষিতে, সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ সৌদি আরবে আটকে পড়া ইরানি হজযাত্রীদের নিরাপত্তা ও সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
২০২৫ সালের জুন মাসে, ইসরায়েল 'অপারেশন রাইজিং লায়ন' নামে একটি বৃহৎ সামরিক অভিযান পরিচালনা করে, যার লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা। এই হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা নিহত হন, যার মধ্যে ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড বাহিনীর প্রধান হোসেইন সালামি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি এবং পরমাণু বিজ্ঞানী মোহাম্মদ মেহদি তেরাঞ্চি উল্লেখযোগ্য।
ইরান এই হামলার প্রতিশোধ নিতে 'অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩' নামে একটি পাল্টা অভিযান শুরু করে, যার মধ্যে ১৫০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ১০০টিরও বেশি ড্রোন ব্যবহার করা হয়। এই হামলায় ইসরায়েলে অন্তত তিনজন নিহত ও ৯০ জনেরও বেশি আহত হন।
এই পরিস্থিতিতে, সৌদি বাদশাহ সালমান ইরানি হজযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যতদিন পর্যন্ত ইরানি হজযাত্রীরা নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারছেন, ততদিন তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে। এই সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সৌদি আরবের এই মানবিক পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একটি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। বিশ্ব সম্প্রদায় আশা করছে, এই ধরনের পদক্ষেপ সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।
