বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুই বাংলাদেশি প্রবাসীর আকস্মিক মৃত্যু

সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুই বাংলাদেশি প্রবাসীর আকস্মিক মৃত্যু
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সংযুক্ত আরব আমিরাতে চট্টগ্রামের দুই প্রবাসীর অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। একজন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ছয়দিন আইসিইউতে থেকে মৃত্যুবরণ করেন, অপরজন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ কক্ষে মৃত্যুবরণ করেন।


প্রথম ঘটনাটি ঘটে শারজায়। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা নুরুল আবছার (২৫) ৭ জুন রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন। মালিহা রোডের ১৭ নম্বর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়ায় একটি প্রাইভেটকারের ধাক্কায় তিনি গুরুতর আহত হন। জানা যায়, জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার না করে রাস্তা পার হওয়ার সময় রাত ১১টা ৩৮ মিনিটে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ও মেডিকেল টিম এসে তাকে শারজার আল কাসেমি হাসপাতালে ভর্তি করে।

১০ জুন চিকিৎসকরা জানান, নুরুল আবছারের মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ছয়দিন আইসিইউতে থাকার পর অবশেষে ১৩ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।

নুরুল আবছার মাত্র এক বছর আগে, ২০২৪ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আমিরাতে পাড়ি জমান জীবিকার সন্ধানে। কিছুদিন আগে পুরোনো চাকরি ছেড়ে একটি নতুন রেস্টুরেন্টে যোগ দিয়ে ছিলেন আনন্দিত। কোরবানির ঈদের ছুটিতে বাইরে ঘুরতে বেরিয়েই ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।

তিনি ছিলেন আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ ও কামরুন নাহার দম্পতির বড় ছেলে। চার ভাইয়ের মধ্যে নুরুল ছিলেন সবার বড়। তিনি ছিলেন আঞ্জুমান খোদ্দামুল মুসলেমিনের প্রবাসী শাখার সক্রিয় সদস্য। প্রবাসী সহকর্মী মোহাম্মদ জাহেদুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মরদেহ শারজার আল কাসেমি হাসপাতালের হিমঘরে রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে মরদেহ দেশে পাঠানো হবে।

অন্যদিকে, একই দিনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মোহাম্মদ নাইয়ুম উদ্দীনের (৩৫)। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে তিনি আমিরাতে কর্মরত ছিলেন। রাস আল খাইমাহ অঞ্চলের সোহান এলাকায় একটি আরব মালিকানাধীন খামারে চাকরি করতেন তিনি।

১৪ জুন সকালে মালিক তাকে ফোনে না পেয়ে সরাসরি বাগানে গিয়ে নিজের রুমে অচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন। পুলিশ ও মেডিকেল টিম এসে নিশ্চিত করে, নাইয়ুম উদ্দীন প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

নাইয়ুম উদ্দীনের চাচাতো ভাই এস. এম. জাহেদুল ইসলাম জানান, আগের রাতে বাংলাদেশ সময় ১০টা ৮ মিনিটে ভিডিও কলে তার সঙ্গে কথা বলেন নাইয়ুম। ফোনে সে অসুস্থতার কথা জানিয়ে দ্রুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। ওই সময় তাকে দুর্বল ও অস্বস্তিকর অবস্থায় দেখা যায়।

নাইয়ুম উদ্দীন নিজের ঘর নির্মাণের কাজও শুরু করেছিলেন। পিলার ও ছাদ শেষ করে বাড়ির বাকি কাজের জন্য টাকা জমাচ্ছিলেন। দুই বছরের মধ্যে দেশে ফিরে স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু তার সব স্বপ্ন মুহূর্তেই থেমে গেল।

তিনি স্ত্রী, এক ছেলে (৪) ও এক মেয়ে (৮) রেখে গেছেন। চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার নাঙ্গলমোড়া গ্রামের সৈয়দ ছদর উদ্দীন খলিফার বাড়ির মোহাম্মদ ইদ্রিস ও নুর বানুর তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে নাইয়ুম ছিলেন চতুর্থ।

দুই প্রবাসীর আকস্মিক মৃত্যুতে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্থানীয় সংগঠনগুলো তাদের মরদেহ দ্রুত দেশে পাঠাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা করছে।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ

আরও পড়ুন