শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

ইসরায়েল-ইরানের পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য, হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুঁশিয়ারি

ইসরায়েল-ইরানের পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য, হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুঁশিয়ারি
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

মধ্যপ্রাচ্যে আবারও বাড়ছে উত্তেজনা। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে টানা কয়েক দিনের হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় পুরো অঞ্চল জুড়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। সর্বশেষ শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল একাধিক বিমান হামলা চালায় ইরানের অভ্যন্তরে—তেহরানসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা ছিল এই হামলার লক্ষ্যবস্তু।

এই হামলা ইরানকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দেয়, যার ফলে কূটনৈতিক ও সামরিক প্রতিক্রিয়া জোরদার করেছে তেহরান। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি উভয় দেশের মধ্যকার বিদ্যমান উত্তেজনাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে এবং এতে করে মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা আরও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই হামলা এসেছে এমন এক সময়, যখন বিশ্ব সম্প্রদায় ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম ও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা কৌশল নিয়ে আগ্রহীভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষকে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের আক্রমণ-প্রতিআক্রমণের ফলে কেবল দুই দেশের মধ্যেই নয়, বরং পুরো অঞ্চলে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে, যা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন করে অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে।
ইসরায়েলের বিমান হামলার জবাবে শক্তি সঞ্চয় করে পাল্টা আঘাত হানছে ইরান। ইরানের তেল ও জ্বালানি ক্ষেত্রগুলো লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলা নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে। এই অবস্থায়, ইসরানের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে—যদি হামলা আরও বাড়ে, তবে তারা হরমুজ প্রণালী বন্ধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে, যা বিশ্ববাজারে জ্বালানি সরবরাহে বিপুল প্রভাব ফেলবে।

বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা রোববার (১৫ জুন) জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসি’র জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক সিনা তুসি বলেছেন, “ইসরায়েল যদি তেল ও জ্বালানি অবকাঠামোয় বড় ধরনের আক্রমণ চালায়, তাহলে ইরানের পক্ষ থেকে হরমুজ প্রণালী বন্ধের সম্ভাবনা প্রবল। এটি হতে পারে তাদের সর্বোচ্চ মাত্রার প্রতিক্রিয়া।”

ইরানের সরকারি সংবাদমাধ্যম আইআরআইএনএনও শনিবার জানিয়েছে, সরকার ইতোমধ্যেই হরমুজ প্রণালী বন্ধের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে।

হরমুজ প্রণালী পারস্য উপসাগরের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে, যা বিশ্বের মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ রপ্তানির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সমুদ্র পথ। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য সংস্থা (ইআইএ) জানায়, এই সংকীর্ণ পানিপথ বন্ধ হলে বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহে বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে।

সিনা তুসি আরও জানিয়েছেন, “এই মুহূর্তে আমরা হরমুজ প্রণালী বন্ধের পর্যায়ে পৌঁছাইনি, কিন্তু ইসরায়েল সম্প্রতি ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে একটি গ্যাসক্ষেত্রে হামলা চালিয়েছে। পাল্টা জবাবে, ইরানও হাইফায় ইসরায়েলের জ্বালানি স্থাপনায় আঘাত হানেছে।”

তিনি জানান, “বর্তমান পরিস্থিতিতে পাল্টা-পাল্টি হামলা অব্যাহত থাকলে পারস্য উপসাগরের জ্বালানি সরবরাহ পুরোপুরি বিপর্যস্ত হতে পারে।”

উল্লেখ্য, হরমুজ প্রণালী ইরান ও ওমানের মধ্যে অবস্থিত একটি সংকীর্ণ জলপথ, যা উপসাগরীয় দেশগুলোর তেল রপ্তানির জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট। এর আগে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার পর ইরান এই প্রণালী বন্ধের হুমকি দিয়েছিল।

বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিশ্ব বাজারে তেলের দাম ও নিরাপত্তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন