শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করীণয়

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করীণয়
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

দেশে আবারও বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। প্রতিদিন বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা। এ অবস্থায় সচেতনতার পাশাপাশি শরীরের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) শক্তিশালী রাখা অত্যন্ত জরুরি বলছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কী করা উচিত সে প্রসঙ্গে কথা বলেন রাজধানী ঢাকার লাইফ কেয়ার মেডিকেল সেন্টার অ্যান্ড বিডিএন পল্লবী ডায়াবেটিস সেন্টারের ডায়েটিশিয়ান ইসরাত জাহান ডরিন। তার মতে- মূলত সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে করোনা প্রতিরোধ সম্ভব। এমনকি আক্রান্ত হলেও সুস্থ থাকা সম্ভব। 

ইসরাত জাহান ডরিন বলেন, ভাইরাস মূলত প্রোটিন-যুক্ত অণুজীব, যা মানবদেহে প্রবেশ করে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট এমনকি মারাত্মক নিউমোনিয়ার মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই শরীরের সুরক্ষা দেয়াল গড়ে তুলতে আমাদের প্রয়োজন খাদ্যাভ্যাসে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদানের সঠিক অন্তর্ভুক্তি।

অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট কী ও কেন প্রয়োজন:

অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হলো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, খনিজ ও এনজাইম, যা শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে কাজ করে। এই ফ্রি র‌্যাডিক্যাল কোষ, প্রোটিন ও ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করে সংক্রমণজনিত ঝুঁকি বাড়ায়।

বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, সি, ই, সেলেনিয়াম, লাইকোপেন, লুটেইনসহ নানা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের কোষকে সুস্থ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ইমিউন সিস্টেমকে সহায়তাকারী কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাবার:

১. রঙিন ফল ও সবজি: বেগুনি, নীল, কমলা ও হলুদ রঙের ফল ও সবজি হলো অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের অন্যতম উৎকৃষ্ট উৎস। যেমন: গাজর, বিট, মিষ্টিকুমড়া, পালংশাক, ব্রোকলি, ক্যাপসিকাম, টমেটো, পারপেল/লাল পাতা কপি, ফুলকপি, করলা (বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ) মিষ্টি আলু ইত্যাদি। যেকোনো ধরনের ও রঙের শাক। এছাড়াও খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে পারেন শিমের বিচি, মটরশুঁটি, বিচিজাতীয় খাবার, বার্লি, ওটস, লাল চাল ও আটা।  

বেগুনি, নীল, কমলা ও হলুদ রঙের ফল ও সবজি হলো অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের অন্যতম উৎকৃষ্ট উৎস। যেমন: গাজর, বিট, মিষ্টিকুমড়া, পালংশাক, ব্রোকলি, ক্যাপসিকাম, টমেটো, পারপেল/লাল পাতা কপি, ফুলকপি, করলা (বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ) মিষ্টি আলু ইত্যাদি। যেকোনো ধরনের ও রঙের শাক। 
বেগুনি, নীল, কমলা ও হলুদ রঙের ফল ও সবজি হলো অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের অন্যতম উৎকৃষ্ট উৎস। যেমন: গাজর, বিট, মিষ্টিকুমড়া, পালংশাক, ব্রোকলি, ক্যাপসিকাম, টমেটো, পারপেল/লাল পাতা কপি, ফুলকপি, করলা (বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ) মিষ্টি আলু ইত্যাদি। যেকোনো ধরনের ও রঙের শাক।

২. পুষ্টি-গুণসম্পন্ন ফলমূল: কমলা, লেবু, কিউই, পেঁপে, আমলকী, আঙুর, আনার, বেরি, তরমুজ, জলপাই ও আনারস ইত্যাদি ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ, যা সর্দি-কাশি ও সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। অন্যদিকে, পেঁপেতে প্রচুর পেপেন এনজাইম আছে, যা মানুষের পাকস্থলীতে আমিষ হজমে সাহায্য করে। আরও আছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ভিটামিন সি।

৩. মসলা উপাদান: রান্নায় নিয়মিত ব্যবহার করা মসলা যেমন—আদা, রসুন, হলুদ, দারুচিনি ও গোলমরিচে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক ও অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় রাখে।

. বাদাম ও বিচিজাতীয় খাবার: কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, পেস্তা, সূর্যমুখী বিচি, কুমড়ার বিচি ইত্যাদিতে রয়েছে ভিটামিন ই ও জিংক, যা কোষ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখে এবং রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।

. দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার: দুধ, টক দই, পনির প্রভৃতিতে রয়েছে প্রোবায়োটিক উপাদান, যা পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং শরীরের প্রতিরক্ষা শক্তি বাড়ায়।

৬. প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: ডিম, দেশি মুরগির মাংস, শিম, মটরশুঁটি, ওটস, বার্লি, লাল আটা ইত্যাদি উচ্চমানের প্রোটিনের উৎস, যা শরীরের কোষ ক্ষয়-পূরণে ও নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে।
ডিম, দেশি মুরগির মাংস, শিম, মটরশুঁটি, ওটস, বার্লি, লাল আটা ইত্যাদি উচ্চমানের প্রোটিনের উৎস, যা শরীরের কোষ ক্ষয়-পূরণে ও নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে।

. চা: গ্রিন টি ও লাল চায়ে রয়েছে এল–থেনিন ও EGCG (Epigallocatechin gallate), যা জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ গঠন করে।

. পর্যাপ্ত পানি ও ঘুম: শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা ও প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম ইমিউন সিস্টেমকে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। অপর্যাপ্ত ঘুম কর্টিসল হরমোন বাড়িয়ে শরীরের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

. রান্নার সময় সতর্কতা:অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার রান্নার সময় অতিরিক্ত তাপ প্রয়োগ এড়িয়ে চলা উচিত। উচ্চ তাপে রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ অনেকাংশেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

যেসব খাদ্য পরিহার করা উচিত:

  • কার্বনেটেড কোমল পানীয়
  • ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য (বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, সাদাপাতা, খয়ের)
  • অতিরিক্ত ঠাণ্ডা খাবার, আইসক্রিম
  • চিনি ও চিনিজাতীয় মিষ্টান্ন

এই খাদ্যগুলো শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। 

শুধুমাত্র ওষুধ বা ভ্যাকসিনই নয়, বরং প্রতিদিনের সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কার্যকরভাবে শক্তিশালী করতে পারে এবং ভাইরাসজনিত সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। তাই নিজে সচেতন হোন, পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন এবং নিজে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সুস্থ রাখুন।


দৈএনকে/জে .আ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন